—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে গোটা রাজ্যের পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়ে প্রতিবাদ-আন্দোলন চলছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন পেশার মানুষ, বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদে সামিল হচ্ছে। কিন্তু জেলার অধিকাংশ ক্লাবকে এখনও এ ব্যাপারে তেমন সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। ক্লাবগুলির ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে নাগরিক সমাজেও।
পূর্ব মেদিনীপুরে ছোট-বড় প্রায় ১২০০টির বেশি ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। অনেকের মতে, এর মধ্যে একটা বড় অংশ শাসকদলের মদতপুষ্ট এবং অতীতে তারা সরকারি অনুদানও পেয়েছে। ফলে আর জি কর কাণ্ডে এরা কোনও ভাবেই সরকার-বিরোধী আন্দোলনের পথে হাঁটছে না এবং নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে।
আবার অনেকে মনে করছেন, এই ক্লাবগুলির অন্তত ৪০ শতাংশ দুর্গাপুজো করে। দুর্গাপুজোর জন্য উদ্যোক্তাদের এ বছর ৮৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছরের তুলনায় তা ১৫ হাজার টাকা বেশি। আগামী বছর আরও ১৫ হাজার টাকা অনুদান বাড়ানোর আগাম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের বিলেও বাড়তি ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছেন। অনুদানও নেবেন আবার আন্দোলনে সামিল হবেন—এই দু’ নৌকোয় পা দিয়ে চলা সম্ভব নয় বলে অনেক ক্লাব প্রতিবাদের পথে হাঁটেনি।
যদিও ক্লাব কর্তাদের একাংশের দাবি, সরাসরি ক্লাবের তরফে কর্মসূচি নেওয়া না-হলেও অরাজনৈতিক ভাবে নাগরিক সমাজ যে সমস্ত প্রতিবাদ কর্মসূচি করছেন তাতে ক্লাব কর্তা-সদস্যরা সামিল হচ্ছেন। ক্লাব কর্তাদের একাংশের অভিমত, এমন সংবেদনশীল ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি জানানো প্রয়োজন। কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই সেই কর্মসূচি নেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছে না তাঁরা।
কী সেই ঝুঁকি? ক্লাব কর্তাদের একাংশের মতে, আন্দোলনে নামলে ক্লাবের কর্তা-সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়ার আশঙ্কা থাকছেই। অনেক ক্লাব দুর্গাপুজো ও কালীপুজো-সহ বিভিন্ন পুজো ও অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে।
তমলুকের হাসপাতাল মোড় এলাকার একটি ক্লাব সম্পাদক প্রহ্লাদ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আমরা ক্লাবের উদ্যোগে কর্মসূচি পালন করিনি। তবে কয়েক দিন আগে অরাজনৈতিক ভাবে শহরে এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আমি অংশ নিয়েছিলাম।’’ অন্য একটি ক্লাবের কর্তা বলেন,‘‘আমাদের ক্লাবে সদস্য সংখ্যা কম। তাঁর উপর বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের সদস্য রয়েছে। তাই আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আমরা এককভাবে আন্দোলন কর্মসূচি নিতে পারিনি । তবে অরাজনৈতিক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আমাদের সদস্য-সদস্যারা অংশ নিয়েছেন।’’
যদিও বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি আনন্দময় অধিকারী বলেন, ‘‘জেলার ক্লাবগুলির একটি বড় অংশ তৃণমূলের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ক্লাবগুলির পুজোয় সরকারি অনুদান পেয়ে থাকে । সম্প্রতি জেলার একাংশ ক্লাব খেলা দিবসে টাকা পেয়েছে। সরকারি রোষে পড়লে এই সব টাকা বন্ধ হয়ে যাবে, সেই ভয়েই অধিকাংশ ক্লাব আর জি করের ঘটনা নিয়ে চুপ করে রয়েছে।’’
বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা (তমলুক) সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আর জি করে ঘটনায় প্রথম দিকে অরাজনৈতিক ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি হয়েছে। তাতে অসংখ্য মানুষ সামিল হয়েছিলেন। কিন্তু মানুষ ক্রমশ বুঝতে পারছেন, বিরোধী দলগুলি শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। তাই অধিকাংশ ক্লাব কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে আর পথে নামতে চাইছেন না। সরকারি অনুদান বন্ধ হওয়া প্রশাসনিক অসুবিধার মুখে পড়ার আশঙ্কায় আন্দোলনে যোগ না দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’