ছত্রধর মাহাতো: ফাইল চিত্র
তাঁর বিরুদ্ধে এনআইএ-কে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। জঙ্গলমহলে জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা তথা সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো সেই তদন্তের বিরুদ্ধে সরব হলেন এক ভিডিয়ো বার্তায়। এক মিনিট ১৬ সেকেন্ডের সেই ভিডিয়ো (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) ছত্রধরের ঘনিষ্ঠজনেদের হাত ধরে হোয়াটস্অ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিয়ো বার্তায় ছত্রধরের অভিযোগ, তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার ও অমিত শাহ তাঁর পিছনে এনআইএ-কে লেলিয়ে দিয়েছেন। ছত্রধরের কথায়, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাকে ব্যতিব্যস্ত করার জন্য ১১ বছরের পুরনো দু’টি মামলার তদন্তভার নিয়েছে এনআইএ। রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে এ সব হয়েছে। এ ভাবে জঙ্গলমহলের মানুষকে দমিয়ে রাখা যাবে না।’’
গত ফেব্রুয়ারিতে জেলমুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরেছেন ছত্রধর। এই জেলমুক্তির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগের কথা শোনা যায়। ছত্রধর যে দিন ফিরেছিলেন, তৃণমূলের তরফে তাঁকে স্বাগতও জানানো হয়। তারপর শাসকদলের সঙ্গে প্রকাশ্যে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখলেও পরে তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচিতে যাতায়াত শুরু করেন ছত্রধর। তাঁর স্ত্রী নিয়তিকে রাজ্য সমাজকল্যাণ পর্ষদের সদস্য পদ দেওয়া হয়। অবশেষে ছত্রধরকে দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদকের পদে বসান তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই আবহেই ২০০৯ সালের পুরনো দু’টি মামলায় নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে এনআইএ। মামলা দু’টি হল— লালগড়ের এক সিপিএম কর্মী খুন ও জেলবন্দি ছত্রধরের মুক্তির দাবিতে বাঁশতলা স্টেশনে ভুবনেশ্বর-দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস আটক।
কিন্তু সেই তদন্তের বিরুদ্ধে কেন এ ভাবে সরব হলেন ছত্রধর?
জানা যাচ্ছে, রাজ্য সম্পাদকের পদ পেলেও জেলায় তৃণমূলের রাজনীতিতে গুরুত্ব পাচ্ছেন না ছত্রধর। লালগড় ব্লক ও জেলা তৃণমূলের একাংশ তাঁকে এড়িয়ে চলছেন। গত ৯ অগস্ট ঝাড়গ্রামে দলীয় বৈঠকে এসে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দলের জেলা ও লালগড় ব্লক নেতৃত্বকে ছত্রধরের সঙ্গে আলোচনা করে যাবতীয় দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, দলের সব কর্মসূচিতে ছত্রধরকে ডাকা হচ্ছে না। এনআইএ সম্পর্কেও নীরব জেলা নেতৃত্ব। অন্য দিকে, বেলপাহাড়িতে মাওবাদী পোস্টার পড়ার পরে ছত্রধরকে বিঁধে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে শাসকদলকে পাশে পেতেই ছত্রধর ভিডিয়ো বার্তা দিয়ে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা।
ছত্রধর মানছেন, ‘‘কিছু বিষয়ে মহাসচিবকে জানিয়েছি। তবে সেটা একান্তই দলের আভ্যন্তরীণ বিষয়।’’ তবে এনআইএ তদন্ত নিয়ে তিনি দুষছেন বিজেপিকেই। বৃহস্পতিবার ছত্রধর বলেন, ‘‘জনজাতি মানুষকে বিজেপি ও কেন্দ্র সরকার পিছিয়ে রাখতে চায়। আমাকে হয়রান করার উদ্দেশ্যটাও সেই কারণেই।’’ আর মাওবাদী পোস্টার প্রসঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘আমি তৃণমূলে যোগ দিতেই বিজেপি ভেঙে দলে দলে লোকজন তৃণমূলে আসছেন। সেই কারণেই বিজেপি-র চক্রান্তে পোস্টার দেওয়া হয়েছে।’’
এনআইএ-তদন্তে দলকে কতটা পাশে পাচ্ছেন? ছত্রধরের জবাব, ‘‘দল যথাসময়ে উত্তর দেবে। আমি মনে করি দল আমার পাশেই থাকবে।’’ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সুব্রত সাহাও বলছেন, ‘‘রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতোকে হয়রান করতেই চক্রান্ত শুরু করেছে কেন্দ্র সরকার। দলীয়স্তরে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক ভাবেও এর মোকাবিলা করা হবে।’