প্রতীকী ছবি।
চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি হলদিয়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিকুরখালি এলাকায় হুগলি নদীর ধার থেকে অর্ধদগ্ধ দুই মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে জানা গিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার নিউ ব্যারাকপুর এলাকার বাসিন্দা ওই দুই মহিলার নাম রমা দে ও রিয়া দে। সম্পর্কে তাঁরা মা ও মেয়ে। ২২ ফেব্রুয়ারি খুনের মূল অভিযুক্ত শেখ সাদ্দাম হোসেন ও তার বন্ধু মঞ্জুর আলি মল্লিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৯ মে হলদিয়া মহকুমা আদালতে চার্জশিট পেশ করে দুর্গাচক থানার পুলিশ। সোমবার হলদিয়া মহকুমা আদালতে এই মামলার চার্জ গঠন হল। অভিযুক্ত মোট ৪ জনের বিরুদ্ধেই ৩০২ খুন ও ২০১ (তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ) ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে।
এ দিন অভিযুক্তরা আদালতে জামিনের আবেদন করলেও বিচারক তা খারিজ করে দেন। হলদিয়া মহকুমা আদালত চত্বরে বিজেপির মহিলা মোর্চার তরফে এ দিন অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, মেয়ে রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সাদ্দামের। সেই সূত্রে দু’জনের ঘনিষ্ঠ ছবি দেখিয়ে মা ও মেয়ে সাদ্দামকে ব্ল্যাকমেইল করে দফায় দফায় টাকা নিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত বিপুল টাকার অঙ্কের চাপ সহ্য করতে না পেরে সাদ্দাম ও মা রমা ও মেয়ে রিয়াকে খুনের পরিকল্পনা করে। তাদের হলদিয়ায় ডেকে এনে হাজরা মোড়ে একটি ভাড়া বাড়িতে রেখেছিল সাদ্দাম। সেখানেই সে মা ও মেয়েকে গলায় দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে। পরে তিন বন্ধুর সহযোগিতায় প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে পেট্রল ঢেলে দুটি দেহ জ্বালিয়ে দেয়। পরে শুকদেব দাস ও আমিনুর হোসেন নামে সাদ্দামের দুই সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়। প্রত্যেকের বাড়ি হলদিয়াতেই।
সরকারি আইনজীবী আবদুল মোহিত বলেন, ইতিমধ্যেই এক অভিযুক্তের জামিন উচ্চ আদালতে খারিজ হয়েছে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে খুন, ষড়যন্ত্র ও তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছে।
এ দিন খুনের আর একটি ঘটনাতেও হলদিয়া মহকুমা আদালতে চার্জ গঠন করা হয়েছে। হলদিয়ার বাসুদেবপুরে বন্ধু সুজয় সাঁতরাকে খুনের অভিযোগে মনোরঞ্জন দাসের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৩ মার্চ নিখোঁজ হন সুজয়। ১৪ মার্চ সুজয়ের বন্ধু মনোরঞ্জন দাসের চপের কারখানা থেকে বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয় সুজয়ের। সুজয়ের পরিবার অভিযোগ করে, মনোরঞ্জন কোদাল দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে সুজয়কে। অভিযোগের ভিত্তিতে ১৫ মার্চ দুর্গাচক থানার পুলিশ মেচেদা স্টেশন থেকে গ্রেফতার করে মনোরঞ্জনকে। তদন্তে জানা যায়, সুজয় ও মনোরঞ্জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। সুজয়ের নামে একটি মোটরবাইক কেনা হয়। কিন্তু মোটরবাইকের মাসিক কিস্তি মেটাত মনোরঞ্জন। সেই কিস্তির টাকা দেওয়া নিয়েই বন্ধুত্বের সম্পর্কে চিড় ধরে। ১৩ মার্চ খাবারের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে মনোরঞ্জন বেঁহুশ করে দেয় সুজয়কে। তারপরে তাকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে খুন করে।