নিরাপত্তা: রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা-মৌতড় পঞ্চায়েতে। নিজস্ব চিত্র।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা-মৌতড় পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচনের সভা ডেকেছিল প্রশাসন। সে সভার পরে, ছড়াল উত্তেজনা। দলেরই কর্মীদের একাংশ রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির এক বিজেপি সদস্যের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের ‘হুইপ’ অগ্রাহ্য করে অন্য এক জনকে প্রধান নির্বাচন করা নিয়েই গোলমাল। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে পুরো ঘটনাই সভার পরে হওয়ায় আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এ দিন পঞ্চায়েতটিতে প্রধান নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্লক প্রশাসন। প্রধান হয়েছেন বিজেপির বলরাম ধীবর।
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা-মৌতড় পঞ্চায়েতে গত নির্বাচনের পরে, বোর্ড গঠন নিয়ে বিস্তর গন্ডগোল হয়েছিল। পঞ্চায়েতের বারোটি আসনের মধ্যে ন’টিতে জেতে বিজেপি। দু’টি পায় তৃণমূল, একটি সিপিএম। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও বোর্ড গঠনের দিনে প্রধান হন তৃণমূলের এক সদস্য। তার পরেই বহিরাগত লোকজন পঞ্চায়েতে মধ্যে ঢুকে পড়ে ভাঙচুর চালায়। নষ্ট করে দেয় নথি। বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বলরাম ধীবর-সহ পঞ্চায়েতের কয়েক জন বিজেপি সদস্য। মামলা হওয়ার পরেই পঞ্চায়েতটিতে প্রশাসক দিয়ে কাজ চালানোর নির্দেশিকা জারি করেছিল জেলা প্রশাসন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধেও আদালতে যায় বিজেপি।
জানুয়ারির শেষে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ বিডিওকে (রঘুনাথপুর ২) নির্দেশ দিয়েছিলেন তিন সপ্তাহের মধ্যে মঙ্গলদা-মৌতড় পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করার। সেই মতো এ দিন প্রধান নির্বাচনের সভা ডেকেছিল প্রশাসন। সভায় অনুপস্থিত ছিলেন তৃণমূল ও সিপিএমের সদস্যেরা। গিয়েছিলেন বিজেপির ন’জন সদস্য। সূত্রের খবর, দলের নির্দেশ ছিল প্রধান হবেন দীনেশ মুর্মু। কিন্তু সভায় বলরাম ধীবরের নামও প্রস্তাব করেন বিজেপির এক সদস্য। ভোটাভুটি হয়। সাত জনের সমর্থন পেয়ে প্রধান নির্বাচিত হন বলরাম ধীবর। বিডিও (রঘুনাথপুর ২) অনমিত্র সোম বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, পঞ্চায়েত আইন মেনে, এ দিন প্রধান নির্বাচনের জন্য মঙ্গলদা-মৌতড় পঞ্চায়েতে সভা ডাকা হয়েছিল। ভোটাভুটিতে বলরাম ধীবর নামে এক সদস্য প্রধান হয়েছেন।”
এ দিকে, দলের নির্দেশ মতো কাজ না হওয়ার খবর চাউর হতেই উত্তেজনা ছড়ায় পঞ্চায়েতের সামনে উপস্থিত বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। সেই সময়ে পঞ্চায়েত চত্বরে ছিলেন রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্য। বলরাম ধীবর-সহ পঞ্চায়েতের অন্য সদস্যদের নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। অভিযোগ, কয়েক জন চড়াও হয়ে তাঁকে মারধর করে। জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির ওই সদস্যের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। দীনেশবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। গোলমাল নিয়ে কিছু বলতে চাননি বলরামবাবুও। তিনি শুধু বলেন, ‘‘প্রধান হিসাবে উন্নয়নই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’’
দীনেশ মুর্মুর বদলে অন্য এক জন প্রধান হওয়ার পিছনে তৃণমূলের ‘মদত’ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজেপির রঘুনাথপুর ২ ব্লকের একটি মণ্ডলের সভাপতি অসীম চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দলের নির্দেশ ছিল প্রধান হবেন দীনেশ মুর্মু। কেন তাঁর বদলে অন্য এক জন প্রধান হয়েছেন, সেটা খতিয়ে দেখতে দলীয় স্তরে তদন্ত শুরু হয়েছে।” রঘুনাথপুর ২ ব্লকের যুব তৃণমূলের সভাপতি স্বপন মেহেতার কটাক্ষ, ‘‘বোর্ড গঠন নিয়ে বিজেপির দলীয় কোন্দলে কী ঘটেছে, সবাই দেখেছেন। বিজেপি এলাকার উন্নয়নের বদলে নিজেদের উন্নয়ন করতে চায়। তা নিয়েই নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে।’’