WB Municipal Election

WB Municipal election 2022: রেলশহরে ফের ‘বেলাইন’ গণতন্ত্র

পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এবার অবশ্য বিরোধীদের আশঙ্কা সত্যি করে নির্বাচনের দিনেই শহরে বোমাবাজি করে বুথ দখল করল সশস্ত্র বাইক বাহিনী। 

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:১৩
Share:

খড়্গপুরে নিজের বাংলোয় দিলীপ ঘোষ। রবিবার। ছবি: কিংশুক আইচ

শেষ পুরসভা নির্বাচনেও খড়্গপুর শহরে শাসক তৃণমূলের সঙ্গে মাফিয়া যোগের অভিযোগ উঠেছিল। সে বার নির্বাচনের পরে বোর্ড গঠনে শহরে শোনা গিয়েছিল গুলি-বোমার আওয়াজ। উঠেছিল পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এবার অবশ্য বিরোধীদের আশঙ্কা সত্যি করে নির্বাচনের দিনেই শহরে বোমাবাজি করে বুথ দখল করল সশস্ত্র বাইক বাহিনী।

Advertisement

খড়্গপুরের বাসিন্দাদের দাবি, এই শহরে এর আগে কোনও নির্বাচনেই এমন গোলমাল দেখা যায়নি। রবিবার কোথাও প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে মারপিটে জড়াল কংগ্রেস-তৃণমূল। কোথাও বুথ দখলের অভিযোগ ঘিরে সংঘর্ষে জড়াল তৃণমূল-বিজেপি। দিনের শেষে সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভারতী বিদ্যাপীঠের ঘটনা। ওই ওয়ার্ডের পাঁচটি বুথে ঢোকে একদল পিস্তলধারী দুষ্কৃতী। তারা বোমাবাজি করে ছাপ্পা চালায় বলে অভিযোগ। ভোটকেন্দ্রের ভিতর থেকেই উদ্ধার হয় বেশ কয়েকটি তাজা বোমাও। একটি বুথের ইভিএমের ভোটিং প্যাড ভাঙচুর করা হয়। নতুন ইভিএম এনে ফের শুরু হয় ভোটগ্রহণ। স্থানীয় বাসিন্দারা চলে আসার পরে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। তবে সুরজ রাই নামে আয়মার এক যুবক ধরা পড়ে যায়। তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। স্থানীয়দের দাবি, ওই দুষ্কৃতী দলে ২৫-৩০ জন ছিল।

ওই ভোটকেন্দ্রের একটি বুথের তৃতীয় পোলিং অফিসার অশোক দাস বলেন, “বেশ কয়েকজন কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে এসে বন্দুক দেখিয়ে ইভিএমে ব্যালট ইস্যু করতে বলছিল। বাইরে বোমাবাজি হচ্ছিল।” ইভিএম ভাঙচুর হওয়া বুথের প্রিসাইডিং অফিসার অভিজিৎ ঘড়া বলেন, “কয়েকজন বন্দুক দেখিয়ে ছাপ্পা দিতে চাইছিল। সেটা না পারায় ইভিএম ভেঙে দেয়।”

Advertisement

প্রায় একই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় ১৮, ২০ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে নিমপুরা রোডে প্রতিবাদে অবরোধ করে বিজেপি প্রার্থী। পরে মুখোমুখি পথে বসেন তৃণমূল প্রার্থীও। খড়্গপুরের রিটার্নিং অফিসার আজমল হোসেন বলেন, “একটি জায়গায় ইভিএম ভেঙে যাওয়ায় তা বদল করা হয়েছে। অন্য জায়গার তুলনায় খড়্গপুরে মোটের উপর শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে।” খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে। বোমা উদ্ধার করেছি। একজনকে গ্রেফতারও করেছি।”

বিরোধীদের অভিযোগ, এই ঘটনায় পিছনে তৃণমূল রয়েছে। এদিন খড়্গপুর শহরেই ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ভোট শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ বলেন, “অনেকেই ভরসা করেছিল এবার হয়তো অবাধ ভোট হবে। কিন্তু ভোটটা অবাধে লুট হয়ে গেল। কাঁথি, ব্যারাকপুর, বহরমপুর, জিয়াগঞ্জ, মাথাভাঙায় ব্যাপক হিংসা হয়েছে। খড়্গপুরে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোট দেখছিলাম। তবে আমার সন্দেহ ছিলই। তিনটের পরে তৃণমূলের বাইক বাহিনী বেরিয়ে বোমাবাজি, মারধর করে ভোট লুট করেছে।” আপনি বেরলেন না? দিলীপের উত্তর, ‘‘আমি এসেছি বলে তৃণমূলের খুব উদ্বেগ ছিল। শনিবার রাতে আমাকে বলা হল এখানে থাকা যাবে না। অথচ নির্বাচনের দিনে তৃণমূলের বিধায়ক, নেতারা বাইরে থেকে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমার কর্মীরা যাতে বুক চিতিয়ে প্রতিরোধ করে তার জন্য আমি এখানে ছিলাম। এই গুণ্ডারাজের বিরুদ্ধে লড়াই করছি বলেই মানুষ আমাদের আগেও জিতিয়েছে, এ বারও জেতাবে।’’ পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলা হবে বলেও জানান তিনি। জেলার বাম নেতা বিপ্লব ভট্টের অভিযোগ, “এদিন ভোট নয়, গণতান্ত্রিক অধিকার লুট হল।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি সমীর রায়ের দাবি, “তৃণমূল প্রশাসনকে ব্যবহার করে দুষ্কৃতী দিয়ে ভোট লুট করে নিজেদের পুরনো ধারা বজায় রাখল।’’ যদিও সব অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “খড়্গপুরে আমি সকাল থেকে ছিলাম। কোথাও কোনও গোলমাল দেখিনি। শুধুমাত্র ৯ নম্বর ওয়ার্ডে অশান্তি হয়েছিল শুনলাম।’’ তাঁর দাবি, ‘‘৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে আমরা কমপক্ষে ৩০টি পাচ্ছি।”

এ দিন সকালে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ট্রাফিক হাইস্কুলে বুথের বাইরে তৃণমূল-কংগ্রেস জমায়েত ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। বেলা বাড়তে ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী হায়দার আলির সঙ্গে কংগ্রেস প্রার্থী বিষ্ণু বাহাদুর কামির বচসা ঘিরে হাতাহাতি হয়। সেই সময়ে তাঁকে ও দলের কর্মীদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। জখম হন এক কংগ্রেস কর্মী। দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল-বিজেপির মারপিট হয়। পরে হিতকারিণী হাইস্কুলের ভোটকেন্দ্র থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক ভুয়ো ভোটারকে ধরে পুলিশ। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী তৃণমূল নেতা দেবাশিস চৌধুরীর দাবি, “এটা বিজেপির কাজ।” যদিও বিজেপি প্রার্থী আর জ্যোতি বলেন, “সকাল থেকে ছাপ্পা চালাচ্ছে তৃণমূল।” ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায় মোবাইল হাতে বুথে ঢুকতে নিষেধ করায় উত্তেজনা ছড়ায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement