ময়দানে: যুব তৃণমূল (বাঁদিকে) ও বিজেপির পদযাত্রা। মেদিনীপুর শহরে মঙ্গলবার। ছবি: কিংশুক আইচ।
সামনেই বিধানসভা ভোট। তার আগে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে যুব দিবস পালন ঘিরে যুযুধান দুই শিবিরের দ্বৈরথ দেখা গেল পশ্চিম মেদিনীপুরেও। কার্যত পিঠোপিঠি কর্মসূচি হল তৃণমূল এবং বিজেপির। শুধু জেলার সদর শহর মেদিনীপুর নয়, সর্বত্রই।
এ দিন দু’দলই নিজ নিজ দলের যুব সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি করেছে। সদর শহরে যুব তৃণমূলের কর্মসূচিতে ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, বিজেপির যুব মোর্চার কর্মসূচিতে ছিলেন দলের জেলা সভাপতি শমিত দাশ। সকালে যুব মোর্চার পদযাত্রা হয়েছে। দুপুরে যুব তৃণমূলের বাইক মিছিল হয়েছে মেদিনীপুরে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘প্রতি বছরই আমরা এই দিনটি পালন করি। এ বারও জেলার সর্বত্র দিনটি পালন করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ভোটের দিকে তাকিয়ে আমরা কর্মসূচি করি না।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের বক্তব্য, ‘‘জেলার বিভিন্ন এলাকায় দলের কর্মী- সমর্থকেরা দিনটি পালন করেছেন। যুব দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচিও হয়েছে।’’ তাঁরও দাবি, ‘‘ভোট বলে নয়, প্রতি বছরই এ ভাবে দিনটি পালন করা হয়।’’ দিনটি পালন ঘিরে অবশ্য এ বার দু’দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই ‘বাড়তি’ উৎসাহ-উদ্দীপনা চোখে পড়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরে দিনভর নানা কর্মসূচি হয়েছে মঙ্গলবার। অরাজনৈতিক উদ্যোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক উদ্যোগেও নানা কর্মসূচি হয়েছে। বিজেপির যুবমোর্চা এবং শিক্ষক সেলের উদ্যোগে এ দিন সকালে মেদিনীপুরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হয়েছে। পোশাকি নাম ‘বিবেক চেতনা পদযাত্রা’। এই শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করেছে। ছিলেন দলের জেলা সভাপতি শমিত। যুব মোর্চার শোভাযাত্রা শেষ হতে না হতেই যুব তৃণমূলের বাইক মিছিল ঢুকতে শুরু করে শহরে। দুপুরে মেদিনীপুরে ‘যুব যাত্রা’ নামে বাইক মিছিল করেছে যুব তৃণমূল। নেতৃত্বের নির্দেশ মতো জেলার বিভিন্ন ব্লক এবং শহর থেকে সংগঠনের কর্মী- সমর্থকেরা বাইক মিছিল করে মেদিনীপুরে পৌঁছন। জমায়েত হয় শহরের কলেজ- কলেজিয়েট স্কুল মাঠে। সেখানে সভার পরে শহরে বাইক মিছিল হয়। ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত। সভা থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ান তৃণমূলের যুব নেতারাও। যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ চক্রবর্তীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমরা কিন্তু লড়াই শুরু করে দিয়েছি। জেলার প্রতিটা ইঞ্চিতে গদ্দারদের আর বিজেপিকে বুঝে নেব। দলের বয়স ২৩ বছর হয়েছে। দল যৌবনে ভরপুর।’’ সংগঠনের জেলা সহ- সভাপতি নির্মাল্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কাঁধে কাঁধ রেখে, হাতে হাত রেখে লড়াই হবে।’’
যুব বিজেপির কর্মসূচিতেও বিবেকানন্দ এবং তাঁর জীবনদর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। কর্মী-সমর্থকদের নেতৃত্ব মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে পরিবর্তন বিবেকানন্দ জাতীয় ও সমাজ জীবনে দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁর আশা ছিল, তা আসবে তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই। বাংলায় পরিবর্তনের পরিবর্তনের সময় চলে এসেছে। এ ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় হতে হবে তরুণ প্রজন্মকে।
এ দিন গড়বেতায় ঘটা করে বিবেকানন্দের জন্মদিবস পালন করল বিজেপি। পিছিয়ে ছিল না তৃণমূলও। দুই শিবিরের পক্ষ থেকে দফায় দফায় গড়বেতার বিবেক মোড়ে বিবেকানন্দের মূর্তিতে মাল্যদান করা হয়। অথচ একবছর আগেও বিবেকানন্দের জন্মদিবস পালনে গেরুয়া শিবিরে তেমন আড়ম্বর ছিল না। তবে এ দিন প্রভাতফেরি, সেবা কর্মসূচি, বিবেকানন্দের জীবনাদর্শ নিয়ে আলোচনাসভা সবই হয়েছে। চন্দ্রকোনা রোডেও বিজেপির পক্ষ থেকে বিবেকানন্দের জন্মদিবস পালন করা হয় প্রভাতফেরি ও সাফাই অভিযানের মধ্য দিয়ে। পিছিয়ে ছিল না তৃণমূলও। গড়বেতায় বিবেক মোড়ে বিবেকানন্দের মূর্তিতে মাল্যদান করেন বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী, ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ-সহ তৃণমূলের ব্লক ও জেলা নেতৃবৃন্দ। হয় বাইক র্যালি।