কিশোর মান্ডি। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের বিজয় মিছিল চলাকালীন সেই পথে বাইক নিয়ে যাওয়ার সময়ে খুন হন বিজেপির কিসান মোর্চার নেতা কিশোর মান্ডি— প্রাথমিক তদন্তে এমনই আভাস পাচ্ছে সিবিআই। কিশোর রোজ সন্ধ্যায় মোটরবাইক নিয়ে ঝাড়গ্রামে যেতেন তাঁর রেলকর্মী বাবাকে আনতে। তাই তদন্তকারীদের অনুমান, ছক কষেই তাঁর উপরে হামলা চালানো হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখছে। কয়েকটি সূত্র ধরে তদন্ত চলছে। সোমবার সিবিআইয়ের আইজি ও ডিআইজি পদ মর্যাদার দুই শীর্ষ অফিসারের নেতৃত্বে তদন্তকারী দল ঝাড়গ্রামে পৌঁছয়। মহুয়াচকে ঘটনার পুনর্নিমাণ করে তদন্ত চলে। সিবিআইয়ের ফরেন্সিক বিভাগ নমুনা সংগ্রহ করে। কিশোরের ভাই ফবল মান্ডি-সহ পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও কথা বলেন তদন্তকারীরা। জামবনি থানায় গিয়েও আইসি অমিত অধিকারীর সঙ্গেও কথা বলেন সিবিআইয়ের শীর্ষ অফিসারেরা।
সিবিআইয়ের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তৃণমূল পরিচালিত স্থানীয় দুবড়া পঞ্চায়েতের প্রধান দেবেন সরেন ও পঞ্চায়েত সদস্য বঙ্কিম মাহাতোর নাম জড়িয়েছে এই খুনে। বঙ্কিম-সহ তিন জনকে আগেই গ্রেফতার করেছে জামবনি থানার পুলিশ। পঞ্চায়েত প্রধান দেবেন-সহ আরও তিনজনকে ফেরার দেখিয়ে মোট ছ’জনের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
অভিযোগ, কিশোরের পরিবার দশজনের নাম অভিযোগপত্রে লিখলেও জামবনি থানায় দায়ের করা মূল এফআইআরে কারও নাম নেই। তবে সূত্রের খবর, এলাকার বিভিন্ন গ্রামের দশ জনের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে সিবিআই। বছর পঁচিশের কিশোর ছিলেন বিজেপির কিসান মোর্চার জামবনি মণ্ডলের সম্পাদক। ভাদুই গ্রামের এই যুবক ৫ মে সন্ধ্যায় বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোন। খাটখুরার মহুয়াচকের কাছে আক্রান্ত হন তিনি। পরে পরিজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। অভিযোগ হয় ৭ মে।
গত জুন ও জুলাইয়ে জাতীয় আদিবাসী কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দল গ্রামে গিয়ে কিশোরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিল। তারপরে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন দুবড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য বঙ্কিম মাহাতো। বাকি দুই ধৃত মণীন্দ্র রানা ও বিকল মাহাতো স্থানীয় তৃণমূল কর্মী। সূত্রের খবর, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য বঙ্কিম মাহাতো ও পঞ্চায়েত প্রধান দেবেন সরেন-সহ ছ’জনের নাম মামলায় যুক্ত করে পুলিশ। এ দিন সিবিআই নতুন করে মামলার এফআইআর করেছে।
গোড়া থেকেই তৃণমূলের দাবি, গ্রামীণ বিবাদে খুন হন কিশোর। অন্যদিকে, বিজেপি বলছে, ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে শাসকদলের লোকজন পরিকল্পিতভাবে কিশোরকে খুন করেছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা বলছেন, ‘‘বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার বার বার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই সিবিআইকে ব্যবহার করেছে। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে যদি সেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়, তাহলে আমরা প্রতিবাদ করব।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি তুফান মাহাতোর পাল্টা প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভোটের পরে সন্ত্রাস করেছে তৃণমূল। যাঁরা এখন ভয় পাচ্ছেন, তাঁরাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কথা বলছেন।’’