বাঁধ দূর অস্ত। কাঁথির শৌলায় গার্ডওয়ালই তৈরি হয়নি। নিজস্ব চিত্র।
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আরেকটা ঝড়ের আগমণ। গত বছর মে মাসে এসেছিল ‘ইয়াস’। এবার ‘অশনি’। তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কাঁথি-১ ব্লকের সমুদ্র তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় কোথাও গার্ডওয়াল নেই, তো কোথাও গতবারের দুর্যোগের জেরে ভাঙা বাঁধ এখনও সম্পূর্ণ মেরামতি করা যায়নি। তাই ‘অশনি’ তাদের ফের ঘরছাড়া করে ত্রিপলের তাঁবুবাসী করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ওই সব এলাকার মৎস্যজীবী পরিবারেরা।
প্রায় এক বছর আগে ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসে’র রুদ্ররূপ দেখেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকূলের বাসিন্দারা। লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল দিঘা, কাঁথি, মন্দারমণি, তাজপুর-সহ একের পর গ্রাম। আবার এসেছে আরেকা মে মাস। এখন ‘অশনি’র আসার কথা শুনে থরহরিকম্প অবস্থা কাঁথি-১ নম্বর ব্লকের সমুদ্র তীরবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের। কাঁথি-১ ব্লকের শৌলার বাসিন্দা নন্দন প্রধান বলেন, ‘‘গতবার ইয়াসের জলে সব নষ্ট হয়েছিল। বাঁধে ত্রিপল খাটিয়ে ছিলাম। আবার একই ঘটনা হলে ফের বাড়ি ছাড়তে হবে।’’ এই শৌলা গ্রামেই রয়েছে মৎস্যবন্দর। আগের দুর্যোগে মত্স্যল বন্দরেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এক বছর ধরে একটু একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছে গ্রাম। কিন্তু আবার ঝড় হলে সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে না তো? প্রশ্ন স্থানীয়দের মনে। মৎস্যজীবী ঘনশ্যাম মণ্ডল বলেন, ‘‘গতবার জল ঢুকেছিল এলাকায়। আমরা চাই গার্ডওয়াল হোক। না হলে প্রতিবার এক সমস্যা হবে।’’
আতঙ্কে দিন কাটছে রামনগর-১ ব্লকের চাঁদপুর, লছিমপুর, জলধা এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দার। ওই এলাকায় ‘ইয়াসে’ সমুদ্র বাঁধ কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তী কালে ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে সেচ দফতর। কংক্রিটের সমুদ্র বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বছর করলেও সম্পূর্ণ সমুদ্র বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। সোমবার তাজপুরে সমুদ্রবাঁধ এলাকা ঘুরে দেখেন রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী শম্পা দাস মহাপাত্র।
গত বছর ইয়াসে জলের তলায় ছিল জুনপুট এবং সংলগ্ন হরিপুর মৎস্য খটি। ওই এলাকাতেও সমুদ্র এবং খটির মাঝে কোনও বাঁধ নেই। আর তা নির্মাণের কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও দুর্যোগ মোকাবিলায় সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হয়েছে। শুকনো খাবার, ত্রিপল মজুত করা হয়েছে। মৎস্য, কৃষি, সেচ ও বিদ্যুৎ দফতরকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। সমস্ত ত্রাণ শিবির কেন্দ্রও তৈরি রয়েছে। এ জন্য কয়েকটি স্কুলকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’’