বছরের সব দিন, ২৪ ঘন্টা পরিষেবা দেওয়ার কথা। অথচ রবিবার, তাই সিজার হবে না, এই যুক্তি দেখিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ করে দেওয়া হল এক আসন্ন প্রসবাকে। ওই মহিলার ‘রেফার-লেটারে’ সে কথা লিখেও দেওয়া হয়েছে।
এ দিন সকালে গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে গুরুবারি মান্ডি নামে বছর বাইশের ওই অন্তঃসত্ত্বাকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে রেফার করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় সেখানেই সিজার করে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। মা-মেয়ে দু’জনেই সুস্থ আছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুধু রবিবার নয়, সপ্তাহের অন্য দিনেও গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পরিষেবা মেলে না। সুলোচনা সিংহ নামে আর এক অন্তঃসত্ত্বাকেও গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা নাগাদ ঝাড়গ্রামে ‘রেফার’ করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে কারণ দেখানো হয়েছিল, অ্যানাস্থেটিস্ট না থাকায় রেফার করা হয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গোপীবল্লভপুরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ওই মহিলা। পরে ঝাড়গ্রামে সিজার করেই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি।
নথি: গুরুবারি মান্ডির ‘রেফার লেটার’। নিজস্ব চিত্র
গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার শুভঙ্কর কয়াল বলেন, “দু’জন অ্যানাস্থেটিস্ট দিয়ে সারা সপ্তাহে দিনের ২৪ ঘন্টা যথাসাধ্য পরিষেবা দেওয়া হয়। নার্সও কম। শনিবার বিকেলের পরে অ্যানাস্থেটিস্ট ছিলেন না। রবিবারও অ্যানাস্থেটিস্ট না থাকায় রেফার করতে হয়েছে।’’ ২২ তারিখ ভর্তি হওয়া প্রসূতিকে কেন ২৫ তারিখ রাত বারোটায় রেফার করা হল? সুপারের জবাব, “সব সময় চেষ্টা থাকে স্বাভাবিক প্রসব হোক। সেটা না হলে সিজার করা প্রয়োজন।
আমজনতাকে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রত্যন্ত সব এলাকায় তৈরি হয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। অথচ সেখানে যথাযথ পরিষেবা মিলছে না বলে অভিযোগ। জঙ্গলমহলের ছবিটাও আলাদা নয়। গোপীবল্লভপুরের এই হাসপাতালে গত ১১ অক্টোবর ‘সিজারিয়ান’ বিভাগ চালু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সিজার করে ৪৮জন শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তবে এখানে প্রায় দিনই সিজার হয় না। তখন ভরসা রেফার। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন রেফারের ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে গোপীবল্লভপুর থেকে ঝাড়গ্রাম ৪৫ কিমি রাস্তায় যাতায়েতের কি এড়াতে প্রসূতিদের বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর ঘটনাও ঘটছে। গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটিতে ৩ জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ আছেন, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দু’জন আর অ্যানাস্থেটিস্ট রয়েছেন দু’জন। সিজারের সময় প্রসূতিকে অজ্ঞান করতে অ্যানাস্থেটিস্ট লাগবেই। কিন্তু হাসপাতাল সূত্রের দাবি, মাত্র দু’জন অ্যানাস্থেটিস্ট আর হাতে গোনা কয়েকজন নার্স দিয়ে সারা সপ্তাহ ‘সিজারিয়ান’ বিভাগ চালানো সম্ভব হয় না। তাই সপ্তাহে এক-দু’দিন সিজার বন্ধ রাখতে হয়।
গত বছর সেপ্টেম্বরে ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে অযথা ‘রেফার’ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিব অনিল বর্মা। হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নার্স ও চিকিৎসক দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু এখনও গোপীবল্লভপুরে নার্সের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটিতে ৫৬ জন নার্স আছেন। অথচ গোপীবল্লভপুরে মাত্র ১৯ জন নার্স দিয়ে পরিষেবা চালাতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
সমস্যার কথা মানছেন ঝাড়গ্রাম জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনী মাঝি। তিনি বলেন, “গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটিতে নার্সের সংখ্যা কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে। সেই কারণে সপ্তাহে সব দিন সিজার করা সম্ভব হচ্ছে না। সমস্যা মেটাতে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।”