গাছের পাতার নকশা পোকার আক্রমণেই তৈরি।
বিশেষজ্ঞরা সাফ বলছেন পোকার ‘কাণ্ড’। স্থানীয়দের দাবি, ‘ঈশ্বরে বার্তা’!
পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগরের মৃত সঞ্জীবনীর পরে এবার নতুন গুজবে মজেছেন কোলঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকার একাংশ বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, কোলাঘাটের সাগরবাড়, শান্তিপুর, পাঁশকুড়ার মাইশোরা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার নারকেল, পেপে, লাউ, কুমড়ো, ঝিঙে গাছের পাতায় এবং ফলে এক-দু’দিন ধরে সাদা রঙের নানা নকশা দেখা যাচ্ছে। দেখতে অনেকটা উর্দু অক্ষরের মতো। যা ‘ঈশ্বরের বার্তা’ বলে গুজব ছড়াতে শুরু করেছে।
গুজব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বুধবার অনেকেই গাছের নীচে রাত কাটান ঈশ্বরের ‘আশীর্বাদ’ লাভের আশায়। কোলাঘাটের সারদাবসান গ্রামের সাদেক আলি বলেন, ‘‘অবাক লাগছে। এগুলি উর্দু হরফে লেখা ধর্মীয় বার্তার মতো মনে হচ্ছে। লোকজন কৌতূহলী হয়ে গাছের নীচে ঘুরছেন।’’
ওই নকশা নিয়ে কথা বলা হয়েছিল একাধিক কৃষি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। গাছের পাতায় ও ফলের উপরে ওই নকশা যে অলৌকিক কিছু নয়, তা সাফ জানাচ্ছেন তাঁরা। ছবি দেখে বিশেষজ্ঞদের দাবি, সেগুলি পোকার আক্রমণে তৈরি। পোকাটি হয় লিফ মাইনর, না হলে মেক্সিকান মাছি বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। তবে নির্দিষ্ট কোন প্রজাতির পোকা, তা নমুনা সংগ্রহের পরে জানাতে পারবেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় জীবন জীবিকা মিশনের জাতীয় উপদেষ্টা তথা কৃষি বিজ্ঞানী কাঞ্চনকুমার ভৌমিক বলেন, ‘‘এটি এক ধরনের পোকার আক্রমণ বলেই মনে হচ্ছে। পোকাটি আমাদের রাজ্যে লিফ মাইনর পোকা নামে পরিচিত। প্রতি বছর শীতের শুরুতে এই ধরনের পোকার আক্রমণ ঘটে।’’ কাঞ্চন জানান, এই পোকাগুলি আকারে ২ মিলিমিটার থেকে ২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। এটি পোকাটির লার্ভা দশা। এই দশা সাধারণত রাতে শুরু হয়। লার্ভা দশায় পোকাগুলির মুখ থেকে সাদা এবং চটচটে এক ধরনের তরল বার হয়। পোকাগুলি তরলের উপর দিয়ে হাঁটার সময় এমন নকশা তৈরি হয়। সাধারণত বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তরলের দাগগুলি উধাও হয়ে যায়। চটচটে তরল গাছের বা ফলের যে অংশে পড়ে সেখানকার ক্লোরোফিল নষ্ট হয়ে যায়। ওই পোকার আক্রমণ ব্যাপক আকারে হলে গাছের বৃদ্ধি ও উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। এমনকী, গাছ মারাও যেতে পারে।
পোকার আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষার উপায় কী? কাঞ্চনবাবু বলেন, ‘‘আক্রান্ত গাছে নিমতেল প্রয়োগ করলে এই রোগ পোকার আক্রমণ কমে। এ ছাড়া, ক্লোরোপাইরি ফস গ্রুপের কীটনাশক প্রয়োগ করেও ঠেকানো যায় এর আক্রমণ।’’
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন দফতরের এডিএফও বলরাম পাঁজাও ছবি দেখে বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে এটি লিফ মাইনর পোকা। তবে সাদা মেক্সিকান মাছিও হতে পারে।’’
উল্লেখ্য, গত বছর জেলায় মেক্সিকান মাছির উপদ্রব দেখা দিয়েছিল। তাতে বহু নারকেল গাছ মারা গিয়েছিল। কোলাঘাটে ফল এবং আনাজ গাছের ওই নকশা দেখে পোকাটি সেই মেক্সিকান মাছি বলে দাবি করছেন জেলা কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর আশিস বেরা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশঙ্কা করছি মাস কয়েক আগে যে মেক্সিকান মাছির উপদ্রব শুরু হয়েছিল জেলায়, এটা সেই মাছিরই আক্রমণ। আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। আক্রমণ বাড়লে নমুনা সংগ্রহ করে সেটিকে পরীক্ষা করে দেখা হবে।’’