মুখ্যমন্ত্রী সই করা এই শংসাপত্র নিয়েই দেখা দিয়েছে বিতর্ক।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই করা একটি শংসাপত্রের প্রতিলিপি দেখিয়ে প্রতিবন্ধী প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন স্কুল থেকে অনুদান সংগ্রহ করছিলেন এক যুবক। শংসাপত্রটি ভুয়ো, এই অভিযোগ করে শুক্রবার ওই যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন পাঁশকুড়ার এক প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকেরা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার মাইশোরার মাংলই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজেকে রাজস্থানের একটি প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষক পরিচয় দিয়ে হাজির হন এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি প্রতিবন্ধীদের হাতের তৈরি কয়েকটি কাগজের কাজ দেখিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ২০০ টাকা অনুদান হিসেবে নেন। তার বদলে তিনি একটি স্লিপ দেন। ওই স্লিপে দেওয়া দু’টি মোবাইল নম্বরে ফোন করেছিলেন সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দু’টি নম্বরই বন্ধ ছিল বলে দাবি করেন মাংলই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহ-শিক্ষক নিত্যরঞ্জন পাহাড়ি। এর পরেই ওই ব্যক্তির সন্দেহজনক গতিবিধি নিয়ে নিত্যরঞ্জন এলাকার অন্য প্রাথমিক স্কুলগুলিকে সতর্ক করেন।
শুক্রবার পূর্ব বাকুলদা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে হাজির হন ওই ব্যক্তি। স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, ওই ব্যক্তি তাঁদের জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি স্কুলে হাতের কাজ প্রদর্শন ও সামগ্রী বিক্রি করতে এসেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই করা এবং বিশ্ব বাংলার লোগো দেওয়া একটি প্যাডের প্রতিলিপি তিনি কর্তৃপক্ষকে দেখান। কিন্তু তা দেখে সন্দেহ হয় স্কুল কর্তৃপক্ষের।
পূর্ব বাকুলদা নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, শংসাপত্রটি অমরিশ রাই নামে রাজস্থানের এক ব্যক্তিকে তাঁদের স্কুলে কাগজের কাজ দেখানোর জন্য লিখেছেন ‘আই পি এস সিনিয়ার সেকেন্ডারি স্কুল, বাপোরা’ নামে একটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ। আর তার নীচে সই রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পূর্ব বাকুলদা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানিয়েছেন, ইন্টারনেটে সংশ্লিষ্ট স্কুলটির খোঁজ করে তাঁরা দেখেন, সেটি হরিয়ানায় অবস্থিত। হরিয়ানার একটি স্কুলের দেওয়া শংসাপত্রে নবান্নের রাইটিং প্যাড, বিশ্ব বাংলার লোগো এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই এল কী করে, সে নিয়ে সন্দেহ প্রশ্ন জাগে শিক্ষকদের। এ ব্যাপারে ওই ব্যক্তিকে জানতে চাওয়া হলে, কোনও সদুত্তর মেলেনি বলে দাবি। বরং তিনি চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। এর পরেই পাঁশকুড়া থানায় খবর দেন পূর্ব বাকুলদা নিম্ন বুনিয়াদী স্কুল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ এসে ওই ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যায়।
স্কুলের তরফে আরও জানানো হয়, আটক হওয়া ব্যক্তির আনা শংসাপত্র এবং আধার কার্ডে নামের বানান দু’রকম ছিল। যদিও ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি কোনও ভুয়ো শংসাপত্র আনেননি।
কিন্তু এভাবে কি স্কুল থেকে অনুদান সংগ্রহ করা যায়? এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার স্কুল পরিদর্শক আমিনুল আহাসান বলেন, ‘‘কোনও প্রতিষ্ঠান কোনও স্কুলে আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট দেখাতে চাইলে তাদের জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে জেলায় কাউকেই এ ধরনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (তমলুক) শিবপ্রসাদ পাত্র বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’