তৈরি হয়েও তালাবন্ধ জঙ্গলমহলের দুই স্টেডিয়াম 

নয়াগ্রাম ও শালবনিতে তৈরি হয়েছে নতুন স্টেডিয়াম। কিন্তু দু’টিই বন্ধ। বাধ্য হয়ে সুব্রত কাপ জয়ী স্কুলের মেয়েদের অনুশীলন করতে হচ্ছে খোলা মাঠে। লিখলেন সৌমেশ্বর মণ্ডলতৈরির বছর দুয়েকের মধ্যেই নয়াগ্রাম স্টেডিয়ামটি এখন প্রায় ভূতের বাড়ি। দেখভালের লোক নেই। মাঠের এ দিক ও দিক ঝোপ গজিয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০১:৫৫
Share:

অপেক্ষা: নয়াগ্রাম স্টেডিয়াম

মাঠ আছে। স্টেডিয়াম আছে। আধুনিক পরিকাঠামো রয়েছে। কিন্তু সব কিছুই তালা বন্ধ অবস্থায়।

Advertisement

কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে তৈরি হয়েছে দু’টি স্টেডিয়াম। কিন্তু দু’টি স্টে়ডিয়ামই তালাবন্ধ। খেলা হয় না। ভিতরে তৈরি হয়েছে আগাছা। অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে মাঠে পাতা দামি ঘাস। উল্টো দিকে, দুই জেলাতেই উপযুক্ত খেলার মাঠের অভাবে অনেক ক্রীড়া প্রতিভা অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জঙ্গলমহলের ছেলেমেয়েরা খেলার বিভিন্ন ইভেন্টে অন্য জেলার থেকে কয়েক কদম এগিয়ে। জাতীয় ও রাজ্য স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সেটি বার বার প্রমাণিত হয়েছে। এই এলাকায় অ্যাথলেটিক্স এবং ফুটবল খুবই জনপ্রিয়। মাওবাদী মোকাবিলায় যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরুর পরে জনসংযোগের উপায় হিসেবে ফুটবলকে বেছে নিয়েছিল প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০১২ সালে নয়াগ্রামে স্টেডিয়াম তৈরির জন্য ৩ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ২০১৩ সালে কাজ শুরু হয়। ৬.৬৬ একর জায়গার উপরে ৭০ মিটার চওড়া ও ১১০ মিটার লম্বা মাঠ তৈরি হয়। মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দু’হাজার দর্শকাসন বিশিষ্ট স্টেডিয়াম তৈরি হয়। এছাড়াও রয়েছে ২৫ আসনের ভিআইপি বক্স, দু’টি ড্রেসিংরুম, একটি ডর্মিটরি। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী ওই স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন করেন। তবে তখনও স্টেডিয়ামটির সামান্য কাজ বাকি ছিল। মার্চ মাসের মধ্যেই সেই কাজ শেষ হয়। তবে স্টেডিয়াম হস্তান্তরে লেগে যায় আরও দেড় বছর। ২০১৭ সালে অক্টোবরে পূর্ত দফতর জেলাশাসকের হাতে স্টেডিয়ামটি হস্তান্তর করে। তার পর নভেম্বরে ‘কন্যাশ্রী কাপ’ হয় সেখানে। ব্যাস। এত দিনে খেলা বলতে ওইটুকুই।

Advertisement

তৈরির বছর দুয়েকের মধ্যেই নয়াগ্রাম স্টেডিয়ামটি এখন প্রায় ভূতের বাড়ি। দেখভালের লোক নেই। মাঠের এ দিক ও দিক ঝোপ গজিয়েছে। মাঠের মধ্যে ঘাসের উচ্চতা এখন প্রায় এক ফুট! বিল বাকি থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগও কেটে দেওয়া হয়েছে। ফলে জলের পাম্প চলছে না। স্টেডিয়ামের ভিতরে থাকা অনেক গাছ জলের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে।

শালবনি স্টেডিয়াম।

নয়াগ্রাম থানা বালিকা বিদ্যাপীঠের ছাত্রীদের ফুটবল দল এখন রাজ্যে অন্যতম শক্তিশালী। এই স্কুলটি ২০১৭ সালের সুব্রত কাপে অনূর্ধ্ব ১৭ ছাত্রীদের বিভাগে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দিল্লিতে ‘খেলো ইন্ডিয়া স্কুল গেমসে’ বাংলার মেয়েদের ফুটবল দলেও এই স্কুলের কয়েকজন ছিলেন। দুর্ভাগ্যের কথা হল, এত সাফল্য যেখান থেকে আসছে সেই স্কুলের নিজেদের খেলার মাঠ নেই। মেয়েদের স্কুলের বাইরের মাঠে অনুশীলন করতে হয়। স্থানীয় ফুটবলপ্রেমীদের প্রশ্ন, কয়েক কোটি টাকা দিয়ে স্টেডিয়াম তৈরি হলেও ছাত্রীদের বাইরের খোলা মাঠে অনুশীলন করতে হবে কেন?

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কোথা থেকে আসবে সেই নিয়েই টানাপড়েন চলছে। স্টেডিয়াম দেখভালের জন্য একজন কেয়ারটেকার প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জেলাশাসক তথা জেলা স্পোর্টস কাউন্সিলের সভাপতি আর অর্জুন আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টির দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

কমবেশি একই সমস্যায় ভুগছে শালবনি স্টেডিয়াম। ২০১৭ সালের এপ্রিলে জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী শালবনির ৬ নম্বর ভীমপুর পঞ্চায়েতের কয়মা এলাকায় তৈরি হওয়া স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু সেটির হস্তান্তর প্রক্রিয়া এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে তৈরি হলেও তালাবন্ধ সেই দরজা। জেলা প্রশাসনের হিসেবে, ওই স্টেডিয়ামের মাঠটি ৭০ মিটার চওড়া ও ১১০ মিটার দীর্ঘ। সেটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা। শুধু মাঠ নয়, মাঠের পাশে রয়েছে ৬টি অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক। এছাড়াও পোলো, ভলিবল, লং জাম্প, হাই জাম্প, ট্রিপল জাম্প, শর্টপাট, ডিসকাস ও জ্যাভলিন ছোড়ার নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। রাতে খেলার জন্য রয়েছে হাই-মাস্ট আলো। মাঠের পশ্চিম দিকের স্টেডিয়ামে প্রায় দু’হাজার লোকের বসে খেলা দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। নয়াগ্রামের মতোই রয়েছে ২৫ আসনের ভিআইপি বক্স, দু’টি ড্রেসিংরুম। কিন্তু আপাতত সব কিছুই পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্রীড়া দফতরের কর্তারা শালবনি স্টেডিয়ামের কাজ দেখতে গিয়েছিলেন। তার পর তাঁরা পূর্ত দফতরকে নতুন করে কিছু কাজ করতে বলেছেন। সে জন্যই স্টেডিয়ামটি চালু করা যাচ্ছে না। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা যুব আধিকারিক প্রভাংশু হালদার বলেন, ‘‘স্টেডিয়ামের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলেই হস্তান্তর প্রক্রিয়া হবে।’’

আপাতত, লাল ফিতের ফাঁস খোলার অপেক্ষা।

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement