শনিবার খড়্গপুর বইমেলার উদ্বোধনে গুণিজনেরা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
‘একা নয় একসাথে, এ বার বইমেলাতে’— এই স্লোগান সামনে রেখেই শুরু হল সপ্তদশ খড়্গপুর বইমেলা। শনিবার শহরের বিদ্যাসাগর আবাসন প্রাঙ্গণে মেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। ছিলেন সাহিত্যিক শেখর বসু, চিত্র পরিচালক রাজা সেন, কবি সৈয়দ হাসমত জালাল প্রমুখ। সব মিলিয়ে ৭০টি স্টল রয়েছে বইমেলা। থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। মেলা চলবে ১৫জানুয়ারি পর্যন্ত।
প্রয়াত সাংসদ নারায়ণ চৌবের বড় ছেলে গৌতম বাবা ও দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত ভাই মানস চৌবের স্মৃতিতে ট্রাস্ট গড়ে রেলশহরে বইমেলার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই মতো ২০০০ সালে ১৮টি স্টল নিয়ে পথচলা শুরু করেছিল বইমেলা। গৌতমের মৃত্যুর পরেও বছর বছর মেলার বহর বেড়ছে। এই বইমেলায় এসেছে সুচিত্রা ভট্টাচার্য, মহাশ্বেতা দেবী, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, হর্ষ দত্তের মতো সাহিত্যিক থেকে নচিকেতা চক্রবর্তী, অনুপম রায়, মমতা শঙ্কর, আকৃতি কক্করের, অভিজিৎ, রূপম ইসলামের মতো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
গিরিময়দান স্টেশন সংলগ্ন বিদ্যাসাগর আবাসন প্রাঙ্গণে এ বারও বইমেলার জাঁক কিছু কম নয়। ‘আনন্দ’, ‘ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট’ (এনবিটি), ‘দে’জ’, ‘পুনশ্চ’, ‘ইভলভ’-এর মতো প্রকাশনা সংস্থা স্টল হয়েছে। প্রথম দিন থেকেই জমজমাট মেলা প্রাঙ্গণ। নগদের আকাল কাটাতে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া পিওএস স্টল দিয়েছে জানিয়েছেন মেলা কমিটির সম্পাদক দেবাশিস চৌধুরী। তবে নোট-সঙ্কটে বইমেলার বাজেট আড়াই লক্ষ টাকা কাটছাঁট করতে হয়েছে বলে জানান দেবাশিসবাবু। দেবাশিসবাবু আরও বলেন, “এ বার যাঁরা আগে থেকে স্টল বুক করেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই এসেছেন। আরও কিছু প্রকাশনা সংস্থা না জানিয়েই চলে এসেছে। আমরা কাউকে ফিরিয়ে দিইনি।”
মেলায় প্রতিদিনই থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে ৪৫০জন শিল্পী মেলায় অনুষ্ঠান করবেন। শেষ দিন, ১৫জানুয়ারি রয়েছে মুম্বইয়ের সঙ্গীতশিল্পী জাভেদ আলির অনুষ্ঠান। অন্য দিনগুলিতে মেলা মাতাবে উত্তরবঙ্গের শিল্পী পারভিন সুলতানার লোকগান, অঞ্জলি মাহাতোর ঝুমুর, বিদ্যুৎ মুখোপাধ্যায়ের সেতার, শৌনক চট্টোপাধ্যায়ের রবীন্দ্র সঙ্গীত, কার্তিক দাস বাউলের গান, সোমলতা আচার্যের গান, কলকাতা কয়ারের ক্ষীরের পুতুল। এ ছাড়াও আন্তঃস্কুল ক্যুইজ, অঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাহিত্য সম্মেলন, জন্ম সার্ধশতবর্ষে ভগিনী নিবেদিতা ও মাদাম কুরি শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন রয়েছে। রয়েছে ভগিনী নিবেদিতার জীবনী ভিত্তিক প্রদর্শনী। মেলা কমিটির অন্যতম সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই বইমেলা সাবালক হতে চলেছে। মেলাকে বাঁচিয়ে রাখতে এ বার নবীনদের এগিয়ে আসতে হবে। ইতিমধ্যেই নবীনদের সাড়াও পাচ্ছি। এটা শহরের সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতে শুভ লক্ষণ।”