Kharagpur

অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী খুন, কোয়ার্টারে হাত-পা বাঁধা দেহ, আটক এক মহিলা

খুন করতে এসে সম্পত্তি লুট! নাকি লুটপাট করতে এসে খুন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০০:২৪
Share:

খড়্গপুরের নিউ সেটলমেন্টের এই কোয়ার্টারেই উদ্ধার হয় জে বি সুব্রহ্মণ্যমের দেহ। নিজস্ব চিত্র

খুন করতে এসে সম্পত্তি লুট! নাকি লুটপাট করতে এসে খুন!

Advertisement

রেলশহরে রেল কোয়ার্টারে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মীর দেহ উদ্ধার ঘিরে এমনই ধন্দে পড়েছে পুলিশ। সোমবার সকালে খড়্গপুরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ সেট্লমেন্টের একটি রেল কোয়ার্টার থে‌কে জে বি সুব্রহ্মণ্যম (৬৫)-এর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘর ছিল লন্ডভন্ড। মৃতদেহের চোখে ভারী কিছুর আঘাত ছিল। মুখে গোঁজা ছিল রুমাল। নাক থেকে বেরোচ্ছিল রক্ত। খাটের মাথার দিকের একটি অংশেও রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। মৃতদেহের পাশেই পড়ে থাকা একটি মহিলাদের ব্যাগ থেকে বেশকিছু ঘুমের ওষুধও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ওই ব্যক্তির হাতে ও গলায় থাকা সোনার একাধিক গয়নারও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ডাকাতি করতে এসে খুন নাকি খুনের পর লুটপাট তা নিয়ে ধন্দে পড়েছে পুলিশ। হাতের ছাপ পরীক্ষার জন্য সিআইডি-র ফরেন্সিক বিভাগে আবেদন করেছে খড়্গপুর টাউন থানা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুব্রহ্মণ্যম নামে ওই ব্যক্তি অকৃতদার। কাজ করতেন রেল কারখানার অ্যাকাউন্টস বিভাগে। সঙ্গে থাকতেন মা, বোন ও ভাই। ১৯৯৪ সালে কোয়ার্টারের কাছেই খুন হন তাঁর ভাই জে বি বিশ্বনাধম। একটি ব্যাঙ্কের লোন বিভাগে কর্মরত বিশ্বনাধমকে ঋণ সংক্রান্ত গোলমালের জেরে খুন হতে হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ২০১৫ সালে অবসর নেন সুব্রহ্মণ্যম। এরপর তাঁর মা এবং বোন মালঞ্চয় একটি বাড়িতে ভাড়ায় চলে যান। সুব্রহ্মণ্যম অন্য একটি রেল কোয়ার্টারে ভাড়ায় থাকছিলেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে যাতায়াত বাড়ছিল পড়শি রেল কোয়ার্টারের এক বিধবা মহিলার। একসময় সুব্রহ্মণ্যমের সঙ্গে একই বিভাগে কাজ করতেন তিনি। তবে পদমর্যাদায় ছিলেন সুব্রহ্মণ্যমের নীচে। বছর তেরো আগে ওই মহিলার স্বামীও খরিদা রেলগেটের কাছে খুন হন। তার পরে খরিদার ভাড়াবাড়ি থেকে নিউ সেটলমেন্টে রেল কোয়ার্টারে চলে যান ওই মহিলা। তাঁর দুই ছেলে। তবে তাঁরা কেউ মায়ের সঙ্গে থাকে না। সুব্রহ্মণ্যমের উল্টোদিকের কোয়ার্টারের বাসিন্দা অরুণা রাও বলেন, “সুব্রহ্মণ্যমের সঙ্গে আমাদের পাড়ার কারও যোগাযোগ ছিল না। তবে ওই মহিলার সঙ্গে

Advertisement

সুব্রহ্মণ্যমের যোগাযোগ ছিল। যদিও সুব্রাহ্মণ্যম বেশি ওই মহিলার বাড়িতে যেতেন। কীভাবে কী হয়েছে বুঝতে পারছি না।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুরে সুব্রহ্মণ্যমের কোয়ার্টারে এসেছিলেন ওই মহিলা। প্রাথমিকভাবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। ওই মহিলা বলেন, “পারিবারিক যোগাযোগ ছিল। রবিবার দুপুরে রেকারিংয়ের টাকা পেয়েছেন কি না জানতে কোয়ার্টারে কিছুক্ষণের জন্য গিয়ে ফিরে এসেছিলাম। বন্ধুদের আনাগোনা ছিল এই কোয়ার্টারে।” ওই মহিলা জানিয়েছেন, সুব্রহ্মণ্যম একটি চোখে দেখতে পেতেন না। তবে সেটি কোন চোখ তা বলতে চাননি তিনি। ওই মহিলা ও সুব্রহ্মণ্যমের কোয়ার্টারে কাজ করেন সুমিত্রা ঘোড়ই। তিনি বলেন, “সকালে কাজ করতে এসে দাদাকে ডাকলেও সাড়া না দেওয়ায় আমি দিদিকে ডাকতে যাই। তার

পরে দিদি এসে দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। তখনই ভিতরে দেখি এই ঘটনা।”

ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন মৃতের বোন জে বি লক্ষ্মী। ঘটনায় অপরিচিতের নামে দাদাকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “দাদা আমাদের ভাড়াবাড়িতে গিয়ে নিয়মিত দেখা করতেন। কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে এমনটা করেছে বুঝতে পারছি না। আমরা অসহায় হয়ে গেলাম।” খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “খুনের বিষয়টি নিশ্চিত। কিন্তু কী উদ্দেশ্যে খুন সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা সমস্ত দিক তদন্ত

করে দেখছি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দ্রুত ঘটনার কিনারা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement