প্রতীকী ছবি।
নন্দীগ্রামে বিজেপির অন্দরে ক্ষোভ ছিলই। কিন্তু দুই বিজেপি নেতার দলত্যাগ সেই ক্ষোভকে যেন ভাঙনের আশঙ্কায় পরিণত করল।
সম্প্রতি দল ছেড়েছেন ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে বিজেপির অন্যতম সৈনিক বটকৃষ্ণ দাস ও নন্দীগ্রামের দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি জয়দেব দাস। শুধু দল ছাড়াই নয়, তাঁরা যে তৃণমূল শিবিরের দিকে ঝুঁকেছেন মঙ্গলবার তৃণমূলে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষের সঙ্গে চা-পানেই তার পরিষ্কার ইঙ্গিত। যার পর পরই বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি প্রলয় পাল ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ‘হৃদয়টা ভেঙে দু’টুকরো হয়ে যাচ্ছে। তবুও নিশ্চুপ, নীরব। ক্ষমা কর বিবেক’। প্রলয় নন্দীগ্রাম থেকেই উঠে আসা নেতা। আর তাঁর হাত ধরেই বিজেপিতে এসেছিলেন বটকৃষ্ণ। ২০২১-এর মহারণে বটকৃষ্ণকে আহ্বায়ক করে এবং জয়দেব দাসকে সামনে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই এবং জয়।
সমাজ মাধ্যমে এমনই পোস্ট আপলোড হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
অথচ সেই বটকৃষ্ণ, জয়দেবরা দল ছাড়লেন শুধু নয়। তাঁরা প্রায় যোগ দিতে চলেছেন শাসক শিবিরে। ভাঙনের এই কষ্ট কি শুধুই আবেগ নাকি আরও বৃহত্তর ভাঙনের আশঙ্কা—এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বিজেপির অন্দরে। প্রলয় পাল বলেন, ‘‘দেখুন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু নেই। দলের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। তবে একসাথে দল করতাম। সেই মানুষটা দল ছাড়লে যন্ত্রণা হবে না?’’
বটকৃষ্ণও বলেছেন, ‘‘প্রলয়দার হাত ধরেই লড়াই শুরু করেছিলাম। লড়াই শুভেন্দু অধিকারীর অত্যাচার, মেঘনাদ পালের লুট আর অশোক করণদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। অথচ এঁরাই আজ জাঁকিয়ে বসেছে বিজেপিতে। বিজেপি এখন ২০২১ সালের তৃণমূলে পরিণত হয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই মাসেই আমি দলত্যাগ ও পদত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু এই নব্য বিজেপিদের চোখ রাঙানিতে ফের কাজ শুরু করতে বাধ্য হই। তখন পাশে কাউকে পাইনি। এখন আমার পাশে অনেকে আছেন। ফের নতুন করে লড়াই শুরু করছি। পুরানো দল ছাড়তে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু ভাল লাগছে সেই অত্যাচারীদের সঙ্গ ছাড়তে পেরেছি বলে।’’
স্থানীয় এক বিজেপি কর্মীর কথায়, ‘‘বিজেপি কর্মীদের অনেকে এখন বুঝতে পারছেন যে সেই বিজেপি আর নেই। তৃণমূলের চোর-জোচ্চর বিজেপির দখল নিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তার ফল দেখতে পাবে ওরা। যাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নন্দীগ্রামের মানুষ বিজেপিকে সমর্থন করেছিল বিজেপি এখন তাদেরই দখলে। তাই মানুষ মুখ ফেরাচ্ছে।’’
যদিও বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিজেপি শৃঙ্খলাপরায়ণ দল। জয়দেব ও বটকৃষ্ণ দলবিরোধী কাজ করছিলেন বলেই কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছিল। পদত্যাগ ও দলত্যাগ সবই ওদের নিজস্ব ব্যাপার। ওদের দলত্যাগে বিজেপিতে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’