তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পড়ল পোস্টার, নালিশ ওড়ালেন মন্ত্রী

নিয়ম ভেঙে বদলি বহু, সরব গেরুয়া

জেলার রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির জেতা আসন এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়লেও তৃণমূলের শক্তঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপি সাংগঠনিকভাবে তেমন দাগ কাটতে পারেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০১:২০
Share:

বদলির নির্দেশের প্রতিবাদে পোস্টার বিএমএস-এর। নিজস্ব চিত্র

রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম লিমিটেডের অধীন কোলাঘাট-সহ রাজ্যের বিভিন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩৯৫ জন কর্মীর বদলির নির্দেশ হয়েছে। আর তারপরেই বদলিকে ঘিরে শোরগোল পড়েছে কোলাঘাট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।

Advertisement

গত শুক্রবার এই বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। সেখানে দেখা যায় ৩৯৫ জনের মধ্যে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেরই ১৩৮ জন কর্মী রয়েছেন। বদলির নির্দেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিতরে পোস্টার দিয়েছে গেরুয়া শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস) প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম কর্মচারী সঙ্ঘ।

জেলার রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির জেতা আসন এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়লেও তৃণমূলের শক্তঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপি সাংগঠনিকভাবে তেমন দাগ কাটতে পারেনি। জেলার দুটি লোকসভা আসনে এবারও জিতেছে তৃণমূল। অধিকারী গড় হিসেবে পরিচিত এই জেলায় দলীয়ভাবে বিজেপির তেমন শক্তিবৃদ্ধি না হলেও গেরুয়া শিবিরের শ্রমিক সংগঠনের মাধ্যমে ‘জমি’ তৈরির কাজ যে তারা শুরু করেছে তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। সম্প্রতি হলদিয়া ডক ইনস্টিটিউটের নির্বাচনে গেরুয়া শ্রমিক সংগঠন একটি আসন জিতেছে। একইভাবে গত ১৫ জুলাই কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মীদের নিয়ে রিক্রিয়েশন ক্লাবের পরিচালন সমিতির সদস্য নির্বাচনে ১৮টি আসনের মধ্যে ১৫টিতে বামেরা। বাকি ৩টি আসন জিতে নেয় গেরুয়া শিবির। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের সকলেই পরাজিত হন।

Advertisement

এই প্রেক্ষিতে বিএমএস নেতৃত্বের অভিযোগ, রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের অধীন সমস্ত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেই শাসক দলের কর্মী সংগঠনের সমর্থন অনেক কমে গিয়েছে। তার জেরে কোলাঘাট-সহ বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপুল সংখ্যক কর্মীকে অন্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএমএস কর্মী সংগঠনের অভিযোগ, সাধারণত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মীদের বদলি হয় ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে। যাতে কর্মীদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ক্ষতি না হয়। কারণ ওই সময় শিক্ষাবর্ষ শেষে নতুন স্কুলে ভর্তির সুযোগ থাকে। কিন্তু এ বার বছরের মাঝপথে এ ভাবে বদলির ফলে কর্মীদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হবে। শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে ছেলেমেয়েদের রেখে কী ভাবে কর্মীরা অন্যত্র গিয়ে কাজ করবেন সেই প্রশ্ন উঠেছে। তা ছাড়া ছেলেমেয়েদের নিয়ে গেলেও শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে তাদের অন্য স্কুল ভর্তি করবে কি না তা নিয়ে ঘোরতর সংশয় রয়েছে।

বদলির বিরুদ্ধে পোস্টার দেওয়ার কথা স্বীকার করে বিএমএসের জেলা সম্পাদক অভিষেক মালের অভিযোগ, ‘‘কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র-সহ সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আমাদের কর্মী সংগঠনের সদস্য বেড়েছে আর তৃণমূলের কর্মী সংগঠন দুর্বল হয়েছে। তাই এ ভাবে কর্মীদের উপর বছরের মাঝপথে বদলির নির্দেশ চাপিয়ে হয়রানির পাশাপাশি আমাদের সংগঠনকেও দুর্বল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাই এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। প্রয়োজনে জোরদার আন্দোলনে নামব।’’

তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের কোলাঘাট ইউনিটের সম্পাদক সুব্রত দরিপা বলেন, ‘‘কর্মীদের এ ভাবে বদলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছি। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বদলিতে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার অসুবিধা হবে। তা ছাড়া অনেক বয়স্ক কর্মীকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি ও পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহিতে বদলির ফলে তাঁদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়তে হবে। তাই বদলির নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আমরা নিগম কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছি।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিএমএসের শক্তি বৃদ্ধির জন্য বদলির নির্দেশের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এ ভাবে পোস্টার দেওয়াও সমর্থন যোগ্য নয়।’’

রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যের বিদ্যুৎক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক রং দেখে বদলি হয় না। নিগমের যে বদলি নীতি আছে তা মেনেই কর্মীদের বিভিন্ন সময় বদলি করা হয়। এর সঙ্গে সিটু, আইএনটিইউসি বা তৃণমূল ইত্যাদি কোনও কর্মী সংগঠন করার কোনও যোগ থাকে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement