ভগবানপুরে মঞ্চে সুকান্ত মজুমদার। নিজস্ব চিত্র।
দলীয় নেতা খুনের প্রতিবাদ কর্মসূচি উপলক্ষ্যে বিজেপির রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরে প্রথম পূর্ব মেদিনীপুরে এলেন সুকান্ত মজুমদার। তবে জেলায় থাকলেও শনিবার সেই মঞ্চে দেখা গেল না রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। আসার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে শেষ মুহূর্তে তিনি আসতে পারবেন না বলে রাজ্য সভাপতিকে ফোনে জানিয়েছেন দাবি বিজেপির জেলা নেতৃত্বের।
বিজেপি রাজ্যপাট দখলে অপারগ হওয়ায় তৃণমূলের ঘর ভেঙে আসা একের পর এক নেতার এখন ‘ঘর ওয়াপসি’ চলছে। বিজেপির অন্দরেও ক্ষোভ-বিক্ষোভে দাঁড়ি পড়ছে না। শুভেন্দুর ‘নারদ যোগ’ নিয়ে মুখ খোলায় হাওড়ায় এক বিজেপি নেতাকে দল বহিষ্কার করেছে বঙ্গ বিজেপি। এই আবহে শুক্রবার আবার ‘অধিকারী গড়’ কাঁথিতে বিজেপির প্রতিবাদ সভায় শুভেন্দু থাকলেও দলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অধীন চার দলীয় বিধায়কের একজনও আসেননি। তা নিয়ে কাঁটাছেঁড়া শেষ হতে না হতেই এ বার সুকান্তর পাশে শুভেন্দুর গরহাজিরা নিয়ে শুরু হল জল্পনা।
ভগবানপুর-১ পূর্ব মণ্ডলের বিজেপি প্রমুখ চন্দন মাইতি গত ৬ নভেম্বর ভাইফোঁটার রাতে খুন হয়েছেন। বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাঁকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। নিহত তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধানের ভাই পিন্টু, মহম্মদপুর-২ পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান-সহ মোট ৩৭ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন চন্দনের স্ত্রী। এই খুনের প্রতিবাদে ৯ নভেম্বর বিজেপি বন্ধ ডেকেছিল। ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবিও তুলেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। এই ঘটনায় পুলিশ তাপস দলপতি নামে অভিযুক্ত এক তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেছে।
চন্দন খুনের প্রতিবাদ কর্মসূচিতেই এ দিন ভগবানপুরে এসেছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত। কোটলাউড়ি মোড় থেকে তাঁর নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মহম্মদপুরে দেড়েদিঘিতে মিছিল শেষে প্রতিবাদ সভা করে বিজেপি। তৃণমূলকে নিশানা করে সুকান্ত বলেন, ‘‘ক্ষমতার দম্ভে ভাবছেন বিরোধীদের প্রাণে মেরে ফেলেবন। তাহলে মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন। সেই তীর আপনার দিকে ফিরে আসবে।’’ তারপর পুলিশকে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘৩৭ জনের মধ্যে একজন মাত্র খুনি গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনকে পরিষ্কার ভাষায় বলছি, আপনারা খুব শীঘ্রই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করুন। পুলিশ যদি ছেড়েও দেয় সিবিআই তদন্ত করিয়ে দুষ্কৃতীদের জেলে পাঠানোর দায়িত্ব আমাদের।’’ তাঁর আরও দাবি, ৩৭জন মূল অভিযুক্তের প্রত্যেকেই নিষিদ্ধ গাঁজা ব্যবসায় যুক্ত। সেই গাঁজা ব্যবসা থেকে পুলিশও লাভবান হয়। এগরার এসডিপিও মহম্মদ বৈদুজামান বলেন, ‘‘একজনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি হচ্ছে। খুব শীঘ্রই বাকিদের গ্রেফতার করা হবে।’’
ভগবানপুরের এই কর্মসূচিতে এ দিন আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আসেননি শুভেন্দু। সুকান্ত আসেন বিকেল চারটে নাগাদ। আর শুভেন্দু এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ নিজের বিধানসভা এলাকা নন্দীগ্রামে গিয়েছিলেন জগদ্ধাত্রী পুজোয় যোগ দিতে। এই প্রসঙ্গে বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়ক বলছেন, ‘‘অসুস্থতার কারণে শুভেন্দুবাবু সভায় আসতে পারবেন না বলে দুপুরে ফোন করে রাজ্য সভাপতিকে জানিয়েছেন। আমাকেও ফোনে একই কথা মেসেজ করেছেন।’’