—প্রতীকী চিত্র।
আগের ভুল আর নয়। এ বার ভোটের পরেও বিজেপি কর্মীদের দুয়ারে নেতারা। উদ্দেশ্য, মনোবল বাড়িয়ে সংগঠন ধরে রাখা।
উনিশের লোকসভা ও একুশের বিধানসভা ভোটের পরে ‘আক্রান্ত’ বিজেপি কর্মীদের পাশে সে ভাবে দেখা যায়নি কার্যকর্তাদের। তা নিয়ে নিচুতলার কর্মীদের একাংশের ক্ষোভও ছিল। এ বার লোকসভার পরে কিন্তু উল্টো ছবি। ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বুথ স্তরের ভীত-সন্ত্রস্ত কর্মীদের পাশে থাকতে প্রতিদিনই ছুটে বেড়াচ্ছেন বিজেপির কার্যকর্তারা। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ঘরছাড়া কর্মী-সমর্থকদের দ্রুত ফেরানোর
ব্যবস্থাও করছেন। গেরুয়া শিবিরের অন্দরের খবর, লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে বুথে যে সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছিল, তা যাতে ভেঙে না যায়, সেই লক্ষ্যেই ভোট শেষেও কর্মীদের কাছে যাওয়া।
হতাশা কাটিয়ে বুথ স্তরের কর্মীরা যাতে দলের কাজে নামতে পারেন, সেই ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। নেতাদের এই বাড়তি তৎপরতায় পদ্ম
কর্মীরাও খুশি।
২০১৯ সালে রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়েও বিভিন্ন জায়গায় নিচুতলার বিজেপি কর্মীরা সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। একুশের বিধানসভার ভোটের পরেও ছবিটা ছিল প্রায় একই রকম। কিন্তু তখন দলের নেতাদের পাশে না পাওয়ায় ভোটের পরে অনেক ব্লকেই বুথ স্তরের সংগঠন ভেঙে পড়েছিল। হতাশা আর আতঙ্কে অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন, অনেকে অন্য দলে নাম লিখিয়েছিলেন। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বার জেলা থেকে মণ্ডল— ভোটের পরে ‘আক্রান্ত’ ও ‘সন্ত্রস্ত’ কর্মীদের পাশে থাকছেন বিজেপির কার্যকর্তারা। গত কয়েকদিন ধরেই শালবনি ও গড়বেতা বিধানসভা এলাকার অনেক গ্রামে গিয়েই দলের ভীত-সন্ত্রস্ত কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে বিজেপির মণ্ডল থেকে জেলা কার্যকর্তাদের।
সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে তাঁরা কর্মীদের বাড়িতে যাচ্ছেন, এক জায়গায় বসে অনেকক্ষণ গল্প করছেন, কর্মীদের নিয়ে এলাকাতেও ঘুরছেন।
চন্দ্রকোনা রোডের একাধিক গ্রামে যাচ্ছেন বিজেপির ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলার নেতা গৌতম কৌড়ি, দলের এসসি মোর্চার রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মদন রুইদাস-সহ অনেকে। মদন বলেন, ‘‘অনেক বুথেই আমরা এ বার জিতেছি। সেই সব বুথেও আমাদের কর্মীদের উপর হামলা হচ্ছে, হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। অনেকে ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা সেই সব এলাকায় গিয়ে কর্মীদের সাহস দিচ্ছি। ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করছি।’’ এক বিজেপি নেতা মানছেন, উনিশ ও একুশের ভোটে আক্রান্ত কর্মীদের পাশে থাকার ক্ষেত্রে কিছুটা ঘাটতি ছিল দলের কার্যকর্তাদের। এতে অনেক জায়গায় বুথ স্তরের সংগঠন নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল, অনেক বুথে ভেঙেও গিয়েছিল সংগঠন। সেই অবস্থা ফের যাতে না হয়, তাই এ বার বাড়তি সতর্ক দল। দলের একটি সূত্র মনে করাচ্ছে, এ বার যে সব বুথে বিজেপির ‘লিড’ আছে, সেখানে সংগঠন যাতে ভেঙে না যায়, সে দিকে বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে বিজেপির শীর্ষ স্তর থেকে। সবটাই ২৬-এর বিধানসভা ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে।
তৃণমূল অবশ্য এ সবে গুরুত্ব দিচ্ছে না। দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার দাবি, ‘‘সন্ত্রাসের মিথ্যা অভিযোগ তুলছে বিজেপি। এ সবে লাভ হবে না।’’