বিজেপির কর্মসূচিতে সুকান্ত মজুমদার, ভারতী ঘোষ-সহ অন্যান্যরা। ঘাটালে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
এখনও টাকা বরাদ্দ হয়নি। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের অনুমোদন পাওয়াও বাকি। তবে সম্প্রতি ‘ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স’ দিয়েছে কেন্দ্র। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণে কেন্দ্রের সেই পদক্ষেপ প্রচারের আলোয় আনতে পথে নামল বিজেপি।
শুক্রবার দাসপুর বাজার থেকে বাইক র্যালি করে কর্মসূচি শুরু হয় বিজেপির। বিকেলে ঘাটালে হয়েছে সভা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, দলের মুখপাত্র ভারতী ঘোষ, ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট, বিজেপির ঘাটাল সাংগাঠনিক জেলা সভাপতি তন্ময় দাস প্রমুখ। দাসপুরের পীরতলা থেকে শুরু হয়ে বাইক র্যালি শেষ হয় কুশপাতায়। সেখান থেকে মিছিল করে বিজেপি কর্মীরা পৌঁছন ঘাটাল পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ডে। সেখানেই সভা হয়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। উনি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৫৪০ কোটি টাকার ছাড়পত্র দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই টাকা বরাদ্দ হয়ে যাবে। কাজও শুরু হবে।’’
কিন্তু মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণে তো এখনও অনেক পথ বাকি? সুকান্তর বক্তব্য, ‘‘১৯৫৯ থেকে এই প্রকল্প নিয়ে নাড়াচাড়া চলছে। কোনও সরকার এতদিন কিছুই করেনি। গত ১১ বছর ধরে তৃণমূল সরকারও কোনও সদর্থক ভূমিকা নেয়নি। এই প্রথম বিজেপি সরকার টাকা মঞ্জুরের ছাড়পত্র দিয়েছে।’’
ঘাটালে বন্যা নিয়ন্ত্রণে এই মাস্টার প্ল্যান বহু পুরনো প্রকল্প। প্রকল্প রূপায়ণে টাকা বরাদ্দ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন চলছে। এরই মধ্যে অবশ্য প্রকল্পের একটি স্তর এগিয়েছে। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ দফতর ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে। বিজেপির দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণে আন্তরিক উদ্যোগী। তাই ঘাটালের মানুষের কথা মাথায় রেখে ওই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর ‘ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স’ দিয়েছে। সে কথাই বিজেপি কর্মীরা তুলে ধরবে। ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটের মন্তব্য, “বিজেপি কথা দিলে কথা রাখে। এ বার রাজ্য সরকার তার কাজটা করুক।”
তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চেয়ারম্যান অজিত মাইতি পাল্টা বলেন, ‘‘বিজেপি মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে এখনও কোনও টাকা বরাদ্দ হয়নি। রাজ্য সরকারের চাপে কেন্দ্র একটা সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। সেই কাজ চলছে।’’ তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশিস হুতাইতের সংযোজন, ‘‘মাস্টার প্ল্যানের কাজ যেটুকু এগিয়েছে তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই হয়েছে। মাস্টার প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত একাধিক খাল সংস্কার করেছে রাজ্য সরকার।’’
গত বছরও দফায় দফায় বন্যায় ডুবেছিল ঘাটাল। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণে সক্রিয়তা দেখায় রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের প্রতিনিধি দল দিল্লিতে প্রকল্পে টাকা বরাদ্দের জন্য দরবার করতে যান। তারপরই সম্প্রতি কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর ‘ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স’ দিয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলির এই কৃতিত্ব আদায়ের প্রচেষ্টায় অবশ্য মন নেই বানভাসি ঘাটালে। ভুক্তভোগীদের একটাই প্রশ্ন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে টাকা বরাদ্দ হবে কবে? কবে থেকেই বা কাজ শুরু হবে?