Bakcha

তৃণমূলের দাপটে বাড়ছে সংঘাত, বাকচায় নুইয়ে পদ্ম

নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানেও সাড়া ফেলেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই সাফল্য ধাক্কা খেয়েছে সম্প্রতি রাজ্যের তিন বিধানসভার উপ-নির্বাচনের ফলে।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

লোকসভা ভোটে রাজ্যে ১৮টি আসনে জিতে শাসকদল তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। লোকসভা ভোটে সাফল্যের পর রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। সেইসঙ্গে নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানেও সাড়া ফেলেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই সাফল্য ধাক্কা খেয়েছে সম্প্রতি রাজ্যের তিন বিধানসভার উপ-নির্বাচনের ফলে।

Advertisement

খোদ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছেড়ে যাওয়া খড়্গপুর বিধানসভা ছাড়াও কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুর বিধানসভায় বিপুল ভোটে জিতেছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটে ধাক্কা খাওয়ার মাত্র ৬ মাস পর উপনির্বাচনের এমন ফল তৃণমূলকে নতুন করে অক্সিজেন জুগিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যার জেরে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার বাকচা ও ভগবানপুর, খেজুরি ও ভূপতিনগরের মতো যে সব এলাকায় বিজেপির দাপট দেখা গিয়েছিল সেখানে এখন তৃণমূলের দাপটে কোণঠাসা তারা। এমনকী বাকচা ও ভগবানপুর-১ ব্লকের গুড়গ্রাম এবং ভূপতিনগরের ইটাবেড়িয়া ও কাঁটাপুখুরিয়া এলাকায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের হাতে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

বাকচায় গোলমালের সূত্রপাত্র ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে। পঞ্চায়েতে নিরঙ্কুশ জয় এলেও প্রধান পদের দাবি নিয়ে তৃণমূলের শুকলাল মণ্ডল ও মিলন ভৌমিকের মধ্যে গোলমাল শুরু হয়। সেই সুযোগে বিজেপির সদস্যরা তৃণমূলের বিক্ষুদ্ধ শিবিরের নেতা মিলন ভৌমিককে সমর্থন করেছিল। শেষপর্যন্ত শুকলাল প্রধান হলেও এলাকায় প্রভাব বাড়ায় বিজেপি। যার জেরে লোকসভা ভোটে বাকচায় বিজেপি প্রায় ৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। বিজেপির দাপটে তৃণমূলের একশোরও বেশি কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া হয়। প্রধান-সহ কয়েকজন সদস্য পঞ্চায়েত দফতরে যেতে না পারায় পঞ্চায়েতের কাজে অচলবাস্থা তৈরি হয়। গত ১৪ অক্টোবর প্রাক্তন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য বসুদেব মণ্ডলকে প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে বিজেপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় খুনে অভিযুক্ত বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করতে গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। শেষ পর্যন্ত বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েনের পর অভিযুক্ত বিজেপির ৬ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

গত ২৮ নভেম্বর তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলে তিনটি আসনেই তৃণমূল বিপুলভাবে জয়লাভ করে। বিক্ষুদ্ধ শিবিরের নেতা মিলন ভৌমিক ফের ফেরেন তৃণমূলের শিবিরে। বাকচায় দলের ঘরছাড়া কর্মীদের ফেরাতে তৎপর হয়ে ওঠেন ময়না ব্লকের তৃণমূল নেতারা। কিছুদিন আগে তৃণমূলের ঘরছাড়া কর্মীরা নিজেদের ঘরে ফিরেছেন। অন্যদিকে বসুদেব খুনের ঘটনায় এলাকা ছাড়া অভিযুক্ত বিজেপির ময়না দক্ষিণ মণ্ডল সভাপতি অলক বেরা-সহ ১৩ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ২৩ ডিসেম্বর হুলিয়া জারি করার পরেও ৮ জানুয়ারির মধ্যে তাঁরা আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় অভিযুক্তদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা শুরু করেছে পুলিশ। আর বিজেপি নেতাদের সেই অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকদের মারধর, বাড়ি ভাঙচুরের অভিুযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

ময়নায় দলের তরফে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির তমলুক জেলা সহ-সভাপতি আশিস মণ্ডল মানছেন, ‘‘বিধানসভা উপ-নির্বাচনে ফল বেরোনোর পর থেকে বাকচায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছিল। এ ছাড়াও বসুদেব মণ্ডল খুনের ঘটনায় আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে হুলিয়া জারি করেছে। বাকচায় নেতৃত্ব না থাকার সুযোগে আমাদের সমর্থকদের উপরে হামলা চালাচ্ছে তৃণমূল।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘গত কয়েকদিনে আমাদের সমর্থদের ১১ টি বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট করেছে তৃণমূলের লোকেরা। চারজন পঞ্চায়েত সদস্য সহ প্রায় ৩০ জন ঘড়ছাড়া।’’

ময়নার ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুব্রত মালাকার বিজেপির এ সব দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘দেড় বছর ধরে বাকচায় বিজেপির সন্ত্রাসে আমাদের কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্য-সহ একশোরও বেশি কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া ছিলেন। আমাদের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য বসুদেবকে খুন করেছে বিজেপির লোকেরা। পুলিশ উপযুক্ত পদক্ষেপ করায় এবং বিধানসভা উপনির্বাচনের ফল বেরোনোর পর দলের কর্মী-সমর্থকদের মনোবল বাড়ায় বাকচায় পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। ঘড়ছাড়া কর্মী-সমর্থকরা ফের বাড়ি ফিরেছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement