বিজেপির প্রতিবাদ মিছিল। নিজস্ব চিত্র।
ত্রিপুরা নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতির ‘আঁচ’ পড়ল এখানেও। সোমবার রাতে নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল শাসকদল তথা তৃণমূলের লোকজনের বিরুদ্ধে। রাতেই এই বিষয়ে মারিশদা থানায় লিখিত অভিযোগ জানান শুভেন্দুর আইনজীবী। যথারীতি অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসক দল।
বিরোধী দলনেতার উপরে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার থানা ঘেরাও কর্মসূচি নেয় জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। এদিন বিকেলে বিজেপি কর্মী ও সমর্থকরা মারিশদা বাজার থেকে মিছিল করে। পরে থানার সামনে দিঘা-নন্দকুমার ১১৬বি জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বচসা বাধে। যদিও শেষ পর্যন্ত অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ। পরে শুভেন্দুর উপরে হামলার চেষ্টায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে মারিশদা থানায় স্মারকলিপি দেয় বিজেপি।
উল্লেখ্য, ত্রিপুরায় যুব তৃণমূল নেত্রী সায়নী ঘোষের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে মারিশদা থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে কাঁথি-৩ ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। বিকেলর তিনটে নাগাদ বিক্ষোভ-মিছিল চলার সময় সেখান দিয়ে কাঁথি থেকে কলকাতার দিকে যাচ্ছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। অভিযোগ, সেই সময় তৃণমূলের মিছিল থেকে শুভেন্দুকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিকর স্লোগান দেওয়া হয়। এমনকী প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি লাঠি নিয়ে তাঁর কনভয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে শুভেন্দুর আইনজীবী অনির্বাণ চক্রবর্তী এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন মারিশদা থানায়। ই-মেইল মারফত সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। শুভেন্দুর আইনজীবীর দাবি, ‘‘বিরোধী দলনেতা হিসেবে জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন শুভেন্দু। তার সত্ত্বেও তাঁর কনভয়ে লাঠি নিয়ে হামলা হয়। তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া ও একই সঙ্গে কটূক্তিও করা হয়েছে। বিরোধী দলনেতা হিসেবে জনপ্রিয় একজন রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাই ই-মেইল করে
অভিযোগ পাঠিয়েছি।’’
এদিন মারিশদা থানায় স্মারকলিপি দেওয়ার পরে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার মিশ্র বলেন, ‘‘শাসক দলের স্থানীয় ব্লক সভাপতি নন্দ মাইতি এবং পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বিকাশ বেজের নেতৃত্বে ৭০ জন তৃণমূল কর্মী পরিকল্পনা মাফিক হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা কোনওরকমে বিরোধী দলনেতাকে বাঁচিয়ে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছেন। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের কাছে দাবি জানিয়ে এসেছি।’’
যদিও এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসক দল। অন্যতম অভিযুক্ত তথা জেলা আইএনটিইউসি-র সভাপতি বিকাশ বেজ বলেন, ‘‘পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। তাই শাসকদলের সকলকে মিথ্যে মামলায় চক্রান্ত করে ফাঁসানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন শুভেন্দু। একদিকে থানা এবং অন্যদিকে ব্লক প্রশাসনিক অফিস। তার মাঝে রাস্তা দিয়ে শুভেন্দু যাচ্ছিলেন। সে সময় ঘটনাস্থলে পুলিশও উপস্থিত ছিল। কোনও কিছুই ঘটেনি।’’
শুভেন্দুর কনভয়ে হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার অমরনাথ কে বলেন, ‘‘যে সময় বিরোধী দলনেতার কনভয় যাচ্ছিল সেই সময়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও কিছু বলা
সম্ভব নয়।’’