তমলুকে হেলমেটহীন বাইক সওয়ারির মৃত্যু

মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশিকার পর পথ নিরাপত্তা নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত পুলিশ। তারই মধ্যে মোটর বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক যুবকের। জখম তাঁর দুই সঙ্গী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০১:৪০
Share:

হেলমেট ছাড়াই পথে। বুধবার ঘাটালে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশিকার পর পথ নিরাপত্তা নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত পুলিশ। তারই মধ্যে মোটর বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক যুবকের। জখম তাঁর দুই সঙ্গী। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না এবং তিনজনের আঘাতই রয়েছে মাথায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তমলুকে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সৈকত মুখোপাধ্যায়ের (২৮)। তাঁর বাড়ি খড়্গপুরের ইন্দা এলাকায়। অথচ পূর্ব মেদিনীপুরে নিয়মিত হেলমেট বিহীন মোটর বাইকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন, জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া।

Advertisement

পূর্বে যখন এই চিত্র, পশ্চিমের সব এলাকায় তখন শুরুই করা যায়নি অভিযান। যেমন ঘাটাল মহকুমা। সেখানে পেট্রোল পাম্প মালিকদের কাছে এখনও কোনও নির্দেশ যায়নি যে, হেলমেট না-থাকলে জ্বালানি তেল দেওয়া যাবে গ্রাহককে। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, পেট্রোল পাম্প মালিকদের মৌখিক জানানো হয়েছে। ফ্লেক্স-ফেস্টুন তৈরি করতে দেওয়া হয়েছে। চলছে ধরপাকড়ও। চলতি সপ্তাহেই ঘাটাল-সহ দাসপুর, চন্দ্রকোনা প্রভৃতি থানা এলাকায় জোর কদমে প্রচার শুরু হবে।

গত কয়েক দিন ধরেই ঘাটাল মহকুমায় হেলমেট বিহীন মোটর বাইক দেখলেই মামলা শুরু করেছে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের একটি সূত্রের খবর, ফি বছরই এমন শতাধিক মামলা করা হয়। কিন্তু তারপরেই রাজনৈতিক নেতারা ফোন করেন অভিযুক্ত আরোহীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিক বলেই ফেললেন, “নেতাদের খবরদারি আগে বন্ধ হওয়া জরুরি।” ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই অবশ্য বলেন, “খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা। আমরাও তাঁর ইচ্ছাকে মান্যতা দিতে প্রস্তুত। পুলিশ সব রকম সহযোগিতা পাবে।” সহযোগিতায় প্রস্তুত সিপিএম নেতা অশোক সাঁতরা, কংগ্রেস নেতা জগন্নাথ গোস্বামীরাও।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘মোটরযান আইন ১৯৮৮’-এর ১২৯ ধারা অনুযায়ী একমাত্র শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়া মোটর বাইক চালানোর সময় হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। বিনা হেলমেটের মোটর বাইক চালককে ১৭৭ ধারায় জরিমানা করা যেতে পারে। কিন্তু এই আইনে যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন পুলিশ মহলের একাংশই। তাঁদের মতে এর চেয়ে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা হলে হয়তো সচেতন করা যেত নাগরিকদের। কাঁথি আদালতের আইনজীবী সুব্রতকুমার দাস, কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী আবু সোহেল মনে করেন, একমাত্র দুর্ঘটনা ছাড়া হেলমেট বিহীন মোটরবাইক আরোহীদের বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া অসম্ভব। মোটর ভেহিক্যালস আইনের ১৭৭ নম্বর ধারায় শুধুমাত্র ১০০টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। গ্রেফতার করারও কোন অধিকার দেওয়া নেই। সোহেল দাবি করেন, আইনের আশু সংশোধন প্রয়োজন।

পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বুধবার জানান, গত রবিবার থেকে জেলা জুড়ে অভিযান চালিয়ে হেলমেটহীন ৯০০ মোটর বাইক চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলার পেট্রোলপাম্পগুলিতেও নির্দেশিকা রয়েছে হেলমেটহীন কোনও আরোহীকে তেল ভরতে দেওয়া হবে না। পুলিশ সুপারের দাবি, ‘‘এই অভিযান চালানোর জেরে হেলমেট পরে মোটর বাইক চালানোর হার বেড়েছে। এখন থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।’’

তবে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানোয় জুড়ি নেই স্থানীয়দের। বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে তমলুক শহরের মানিকতলা, শঙ্করআড়া, হাসপাতাল মোড় এলাকায় রাজ্য সড়কে তমলুক থানার পুলিশ অভিযানে নামে। দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত মাত্র দু’ঘণ্টায় ২০ জন হেলমেটহীন বাইক চালককে ধরা হয়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৃত সৈকত মুখোপাধ্যায় (২৮) ও তাঁর দুই বন্ধু পিন্টু মাইতি এবং অঙ্কুশ দোলই মোটর বাইকে চড়ে রাজ্য সড়কের দিকে যাচ্ছিলেন ওঠার মুখেই একটি গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। রাস্তায় ছিটকে পড়েন তিনজনে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁদের জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সৈকতের মৃত্যু হয়। পিন্টু ও অঙ্কুশ একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

(তথ্য সহায়তা: আনন্দ মণ্ডল, সুব্রত গুহ ও অভিজিৎ চক্রবর্তী)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement