উষালগ্নে তর্পণ। রবিবার তমলুকে রূপনারায়ণ নদে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
করোনার কারণে গত দু’বছর দুর্গাপুজোর উৎসবের আমেজে ভাটা পড়েছিল। প্রভার পড়েছিল মহালয়ায় তর্পণেও। এবার করোনা ভ্রূকুটি অনেকটাই ম্রিয়মাণ। ফলে সাড়ম্বরে উৎসব পালনের প্রস্তুতি চলছে বিভিন্ন পুজোর মণ্ডপে। সেই আবহে মহালয়াতেও পূর্বপুরুষের স্মৃতি তর্পণে রূপনারায়ণ নদ, হলদি, কংসাবতী সহ জেলার নদীর ঘাটগুলিতে ভোর থেকেই উপচে পড়ল ভিড়।
রবিবার ভোর থেকেই তমলুক শহরের স্টিমারঘাট, দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়া, মহিষাদলের দনিপুর ও কোলাঘাট শহরের কাছে গৌরাঙ্গঘাট, কাঠচড়ার ঘাট-সহ রূপনারায়ণ নদের বিভিন্ন ঘাটে বহু মানুষ তর্পণের জন্য জমায়েত হন। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ওই সব ঘাটে পূর্ব পুরুষদের স্মৃতির উদ্দেশে তর্পণ করেন প্রচুর মানুষ। এ দিন পুরুষদের পাশাপাশি তর্পণে মহিলাদের সংখ্যাও যথেষ্ট। তবে তমলুক শহরের কাছে রূপনারায়ণ নদে বিশাল চর জেগে ওঠায় ভাটার সময়ে স্রোত অনেক দূরে সরে যায়। ফলে স্টিমারঘাটের কাছে নদে ডুব দিয়ে স্নান করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন বহু মানুষ। ডুব দিয়ে স্নান ও তর্পণের জন্য প্রায় ২ কিলোমিটার বিস্তৃত বালির চর পেরোতে হয়েছে মানুষজনকে। অনেকে আবার স্টিমারঘাটের কাছে অল্প জলেই স্নান সেরে তর্পণ করেন।
এদিন সকালে রূপনারায়ণে তর্পণ করতে এসেছিলেন তমলুক শহরের ধারিন্দা এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিত ঘাঁটা। তিনি বলেন, ‘‘বাবার মৃত্যুর পর গত কয়েক বছর ধরেই মহালয়ায় স্টিমারঘাটের কাছে রূপনারায়ণে তর্পণ করতে আসি। কিন্তু ঘাটের কাছে রূপনারায়ণের বুকে বিশাল চর তৈরি হওয়ায় ভাটার সময়ে স্রোত অনেকটা দূরে সরে যায়। ফলে এদিন স্টিমারঘাটের কাছ থেকে চরের উপর দিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার হেঁটে দিয়ে জলে দাঁড়িয়ে তর্পণ করতে হয়েছে।’’
স্টিমারঘাটে রূপনারায়ণে তর্পণ করতে আসা লোকজনের জন্য পুরসভার তরফে অস্থায়ী শৌচাগার তৈরি করা হয়েছিল। নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন ছিল পুলিশ বাহিনী। এদিন তর্পণ নির্বিঘ্নে হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মহিষাদল ব্লকের দনিপুর ও কোলাঘাট শহরের কাছে রূপনারায়ণে ঘাটের কাছে স্রোত থাকায় সেখানেই বহু মানুষ তর্পণ করেন। কোলঘাট শহরে রূপনারায়ণের ঘাটে তর্পণ করেন পূর্ব পাঁশকুড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী। এদিন তর্পণের জন্য প্রচুর ভিড় জমেছিল নন্দকুমার ও চণ্ডীপুরে নরঘাটের কাছে মাতঙ্গিনী সেতু সংলগ্ন হলদি নদীর ঘাটে। ময়নার ঢেউভাঙার কাছে কংসাবতী নদীর ঘাটেও অনেকে তর্পণ করেন।