সমৃদ্ধির কামনায় আজ করম পরব

মাঠে বেড়ে উঠছে সবুজ ধান গাছ। শরতের আগমনে শস্য ও সন্তানের সমৃদ্ধি কামনায় আজ, সোমবার জঙ্গলমহলে মূলবাসীদের করম পরব। জঙ্গলমহলের গ্রামগঞ্জে মূলত কুড়মি (মাহাতো) সম্প্রদায়ের মূলবাসীরা এ দিন মেতে ওঠেন উৎসবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

করম ডাল নিয়ে শোভাযাত্রা। —ফাইল ছবি।

মাঠে বেড়ে উঠছে সবুজ ধান গাছ। শরতের আগমনে শস্য ও সন্তানের সমৃদ্ধি কামনায় আজ, সোমবার জঙ্গলমহলে মূলবাসীদের করম পরব। জঙ্গলমহলের গ্রামগঞ্জে মূলত কুড়মি (মাহাতো) সম্প্রদায়ের মূলবাসীরা এ দিন মেতে ওঠেন উৎসবে। সেই সঙ্গে ভূমিজ, বাগাল, কামার, কুমোর সম্প্রদায়ের মানুষজনও উৎসবে সামিল হন। ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর দিনটিকে স্থানীয়রা বলেন পার্শ্বএকাদশী। প্রচলিত বিশ্বাস, এই বিশেষ তিথিতে নররূপী নারায়ণ অনন্ত শয্যায় পাশ ফিরে ভূলোকের দিকে তাকিয়েছিলেন। যে দিকে নারায়ণের দৃষ্টি পড়েছিল, পৃথিবীর সেই অংশ হয়ে উঠেছিল শস্যশ্যামল। এমনই এক বিশেষ দিনে কুড়মি সম্প্রদায়ের মধ্যে করম ঠাকুরের পুজোর প্রচলন করেছিলেন কর্মু নামে এক রাজপুত্র। এই তিথিতে করম গাছের ডালকে দেবজ্ঞানে পুজো করেন জঙ্গলমহলের মূলবাসীরা।

Advertisement

জনশ্রুতি, এক নিঃসন্তান রাজা সন্তান কামনায় করম দেবতার পুজো করেছিলেন। সেই রাজার দুই সন্তান হয়-কর্মু আর ধর্মু। পরে কর্মুর উদ্যোগে কুড়মি (মাহাতো) সম্প্রদায়ের মধ্যে করম পুজোর প্রচলন হয়। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী, একটি করম গাছকে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে ‘জাগানো’ হয়। এরপর সেই গাছের একটি পাতা সমেত ডাল কেটে ঢোল-মাদল বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে গ্রামের মোড়লের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। মহিলাদের সমবেত করমগীতির সুরমূর্চ্ছনায় আঙিনার মাঝে করম ডাল পোঁতেন ‘লায়া’ (পূজারী)। পার্শ্ব একাদশীর সন্ধ্যায় সেই গাছের ডাল ঘিরে গোল হয়ে বসে বালক-বালিকারা। মূলত, বালক-বালিকারাই এই পুজোর ব্রতী। সঙ্গে থাকেন এয়োতিরাও। কর্মু আর ধর্মুর কাহিনী শোনান লায়া। করম দেবতার উদ্দেশে সিঁদুর, চালগুঁড়ি, আমলকি গাছের ডালপালা ও কেয়া পাতার নৈবেদ্য ও শশা গাছের পাতার উপর গোটা শশা রেখে নিবেদন করা হয়। একটি ডালায় থাকে অঙ্কুরিত গম, ছোলা, ভুট্টা, সর্ষে ও বিভিন্ন ডাল শস্য। এই ডালাটির উদ্দেশ্যে বিশেষ ‘জাওয়া নৃত্য’ পরিবেশন করেন মহিলারা। এই নাচে কোনও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার হয় না। করম পরবের সারা রাত ধরে চলে পাঁতা নাচ। পাঁতা নাচের সময় অবশ্য ঢোল, মাদল, ধমসা বাজে।

ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “ডালায় অঙ্কুরিত দানা শস্যগুলি প্রজননের প্রতীক। উন্নত শস্য ও সুনাগরিক দিয়ে সমাজ গড়ার বার্তা রয়েছে এই উৎসবে।” ঝাড়গ্রাম শহরের একমাত্র করম পরবের অনুষ্ঠান হয় কেন্দ্রীয় বাস স্ট্যান্ড লাগোয়া মধুবন এলাকায়। এ বছর উৎসবের ৩১ তম বর্ষ। জঙ্গলমহলের প্রবীণ সাহিত্যিক ললিতমোহন মাহাতো, আইনজীবী দীপক মাহাতোদের কথায়, “আমাদের সমাজ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে করম পরবের পরম্পরা। করম পরবই আমাদের শারদীয় উৎসব।”

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement