বৈঠক থেকে নকশা তৈরি, শুরু তোড়জোড়

ঘোষণা মতোই শিল্পের উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ার তৎপরতা শুরু হয়ে গেল গোয়ালতোড়ে। শুক্রবার সাতসকালে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকরা এলাকায় যান। বিকেলে যান পূর্ত দফতরের আধিকারিকরা। দফায় দফায় প্রশাসনিক বৈঠক হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “জমির কোনও সমস্যা নেই। এ বার আমরা পরিকাঠামোর উপর জোর দিচ্ছি।”

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

গোয়ালতোড় শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫১
Share:

নকশা মিলিয়ে দেখছেন ভূমি সংস্কার দফতরের প্রতিনিধি দল। নিজস্ব চিত্র

ঘোষণা মতোই শিল্পের উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ার তৎপরতা শুরু হয়ে গেল গোয়ালতোড়ে। শুক্রবার সাতসকালে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকরা এলাকায় যান। বিকেলে যান পূর্ত দফতরের আধিকারিকরা। দফায় দফায় প্রশাসনিক বৈঠক হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “জমির কোনও সমস্যা নেই। এ বার আমরা পরিকাঠামোর উপর জোর দিচ্ছি।”

Advertisement

বুধবার সিঙ্গুর উৎসবের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টাটা মোটর্সকে গোয়ালতোড়ে গাড়ি কারখানা করার ডাক দিয়েছিলেন। সেই মতো সেখানকার এক হাজার একর সরকারি জমিতে ‘অটো হাব’ গড়ার জন্য শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র টাটাদের সরকারি ভাবে প্রস্তাব পাঠাবেন বলেও ঠিক হয়ে গিয়েছে। সেই সূত্রেই শিল্প-পরিবেশ তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে গোয়ালতোড়ের দুর্গাবাঁধে।

দুর্গাবাঁধে মোট জমি রয়েছে ৯৫০.১৬ একর। সেই ষাটের দশক থেকে এখানে কৃষি দফতরের বীজ খামার চলছে। ঠিক কতটা জমিতে খামারের চাষবাস হয়, কতটা জমি পতিত— এ সব দেখতেই এ দিন সকালে গোয়ালতোড় ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক বিভাস ঘোষের নেতৃত্বে একটি দল দুর্গাবাঁধে যান। সেখানে একপ্রস্থ বৈঠকের পরে এলাকা ঘুরে নকশাও তৈরি করা হয়। গিয়েছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমিসংস্কার) সুরেন্দ্রনাথ মিনাও। পরে তিনি বলেন, “যাবতীয় তথ্য-সহ নকশা তৈরি হয়েছে। এ বার সব তথ্য কলকাতায় পাঠিয়ে দেব।’’

Advertisement

বিকেলে এলাকায় এসেছিলেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি। সঙ্গে দফতরের পদস্থ আধিকারিকরা। এসেছিলেন শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোও। বিডিও স্বপনকুমার দেবের উপস্থিতিতে তাঁরা ব্লক অফিসে বৈঠকও করেন। পূর্ত দফতর এখানে রাস্তা তৈরি করবে বলে ইতিমধ্যে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি হয়ে গিয়েছে। শৈবালবাবু বলেন, “প্রথম পর্যায়ে চন্দ্রকোনা রোড থেকে বীজ খামার পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করা হবে। গড়বেতা দিয়েও যাতে ওই এলাকায় পৌঁছনো যায় দ্বিতীয় দফায় তাই ওই অংশের রাস্তাও চওড়া করা হবে।’’

এ দিন অবশ্য চন্দ্রকোনা রোড পর্যন্ত রাস্তাটি নিয়েই আলোচনা হয়। কারণ, চন্দ্রকোনা রোডেই ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং রেলস্টেশন। ফলে, দুর্গাবাঁধে পৌঁছতে এই রাস্তার গুরুত্ব অপরিসীম। তবে যে অংশে রাস্তা হবে, সেখানে গোয়ালতোড় শহরের একাধিক ঘিঞ্জি রাস্তা রয়েছে। সেই জট কাটিয়ে কী ভাবে কাজ এগোবে এ দিন তা নিয়ে আলোচনা হয়। শৈবালবাবুর কথায়, ‘‘গোয়ালতোড়ে ঢোকার আগে ব্লক অফিস থেকে দেড় কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর জন্য কিছু জমি আমাদের কিনতে হবে। আমরা এ দিন প্রাথমিক ভাবে নকশা তৈরি করেছি। কত জমি কিনতে হবে,কতটা খাসজমি রয়েছে সব নিয়েই আলোচনা হয়েছে। জমি কিনলেও চাষিদের সরকারি নিয়ম মেনেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’ এ ছাড়া, জিরাপাড়া সংলগ্ন ঢেকিঞ্চাতেও একটি বাইপাস রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিধায়ক শ্রীকান্তও বলেন, ‘‘জমি পেতে কোনও সমস্যা হবে না।’’

২০১৩-তে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যখন দুর্গাবাঁধে এসেছিলেন, তখনই গোটা চত্বর পাঁচিল দিয়ে ঘেরা, নতুন রাস্তা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত তিন বছরে সে সব কাজ এগোয়নি। কিন্তু গোয়ালতোড়ের এই জমি ঘিরে নতুন করে শিল্প সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায়, সেই সব পুরনো নির্দেশ রূপায়ণেই জোর দিচ্ছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বীজ খামারের মধ্যে পুকুর, খাল ও রাস্তার জন্য ব্যবহৃত মোট ৭০ একর জমি বাদে বাকি অংশ (প্রায় ৮৮০ একর) শিল্পের পক্ষে উপযুক্ত রয়েছে। তবে এখানে শিল্প হলে বীজ খামারের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। খামারের কর্মী থেকে স্থানীয় বাসিন্দা সকলেই চান, খামার বাঁচিয়েই শিল্প হোক। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আর প্রশাসনও আগে রাস্তা, জল, বিদ্যুতের মতো প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরিতেই জোর দিচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “শুধু জমি থাকলেই তো হবে না। শিল্প গড়তে রাস্তাঘাট, জল, বিদ্যুৎ সব সুবিধাই থাকতে হবে। পরিকাঠামোর অভাবেই গত বছর দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিরা দুর্গাবাঁধে এসেও পরে আর আগ্রহ দেখাননি। আর যাতে এমন পরিস্থিতি না হয়, সে জন্য এ বার আমরা যথেষ্ট সতর্ক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement