চিড়িয়াখানায় গরমের হাত থেকে স্বস্তি পেতে চৌবাচ্চার জলে ডুবে ভালুক। নিজস্ব চিত্র
গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ চলছে জেলা জুড়ে। বইছে লু। এই গরমে জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কের বন্যপ্রাণীদের স্বস্তি দিতে বদল এসেছে খাবারে। চিতা বাঘ-সহ বিভিন্ন পশুদের শরীর ঠান্ডা রাখতে প্রতিদিন সকালে স্নানও করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাউকে দেওয়া হচ্ছে গুড় ও নুন জল। কাউকে দেওয়া হচ্ছে ওআরএস মেশানো জল। এছাড়াও রসালো জাতীয় খাবারও থাকছে।
বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘তীব্র গরমের জন্য বিজ্ঞানসম্মত ভাবে চিড়িয়াখানাগুলিতে সমস্ত পশু ও পাখির খাবারের মেনু বদল করতে বলা হয়েছে। সমস্ত পশু-পাখির এনক্লোজারে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা ও ওআরএস দিতে বলা হয়েছে। প্রত্যেক পশুকে প্রতিদিন স্নান করাতে হবে।’’
ঝাড়গ্রাম শহরের উপকণ্ঠে ধবনী বিটে সাড়ে ২২ হেক্টর জায়গা জুড়ে রয়েছে জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক। সেটি ঝাড়গ্রামবাসীর কাছে ‘ডিয়ার পার্ক’ নামেই পরিচিত। রাজ্যে পালাবদলের পরে ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানার সম্প্রসারণ ঘটিয়ে এই জুলজিক্যাল পার্ক তৈরি করা হয়েছিল। কোটি কোটি টাকা খরচ করে চিড়িয়াখানার আমূল পরিবর্তন করা হয়েছিল। এখানে এখন কয়েকশো চিতল হরিণ, পাঁচটি সম্বর হরিণ, ২২টি স্বর্ণমৃগ, রকমারি পাখি, নীলগাই, তারা কচ্ছপ, গোসাপ, এমু পাখি, সজারু, নীলগাই, ভালুক, হায়না, নেকড়ে, সাপ, গন্ধগোকুল, বাঁদর, হনুমান, মদনটাক পাখি, বন-মুরগি, ময়ূর, কালিজ ও গোল্ডেন ফিজেন্ট, চারটি পূর্নাঙ্গ চিতা বাঘ ও তিনটি সদ্যোজাত শাবক রয়েছে।
শালবনের মাঝে প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানায় মাস তিনেক আগে নেকড়ের একটি শাবক হয়েছে। গত দু’বছর আগে বাঘরোলও শাবক প্রসব করেছিল। এর আগে হায়নাও শাবক প্রসব করেছে এখানে। দু’সপ্তাহ আগে চিতা বাঘ হর্ষিণী ফের তিনটি সন্তান প্রসব করেছে। হর্ষিণী, সোহেল, সুলতান ও শাহাজাদ— এই চার পূর্ণাঙ্গ চিতাবাঘকে এখন সকালে ও সন্ধ্যায় দু’বার স্নান করানো হচ্ছে।
চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, নীলগাই, সম্বর, স্বর্ণমৃগ ও অন্য হরিণদের সুস্থ রাখতে ওআরএসের পাশাপাশি গুড় ও নুন জল গুলে দেওয়া হচ্ছে। পাখিদের তরমুজ, শশা জল জাতীয় খাবার দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি এনক্লোজারের চৌবাচ্চা দু’বার থেকে তিনবার জল ভরনো হচ্ছে। বাড়তি জল দিয়ে এনক্লোজারের ভিতর ভিজিয়ে রাখা হচ্ছে। পাখির এনক্লোজারে খড়ের ছাউনি করে দেওয়া হয়েছে। খড় জল দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গরমে ‘ব্যাকরেটিয়াল ইনফেকশন’ আটকাতে প্রতিদিন স্প্রে করা হচ্ছে। বড় পাখিরগুলির এনক্লোজারের উপরে ‘নেটিং’ দিয়ে ছাউনি দেওয়া হয়েছে, যাতে সরাসরি সূর্যের আলো না ঢুকে। চিতাবাঘ-সহ সমস্ত পশু-পাখিদের সুস্থ রাখতে জলের সঙ্গে ওআরএস মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বানর ও শকুনের এনক্লোজারে নতুন করে বড় চৌবাচ্চা করে দেওয়া হয়েছে।
প্রাণী চিকিৎসক চঞ্চল দত্ত জানান, গরমে পশুপাখিদের খিদে কমে যায় এবং ডিহাইড্রেশন হয়। তাই ওআরএস এবং লিভারের ওষুধের দেওয়া হচ্ছে। ওই চিড়িয়খানার রেঞ্জ অফিসার অতুল প্রসাদ দে বলেন, ‘‘নিয়মিত নজরদারি রাখা হচ্ছে। প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খাবার দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত স্নান করানো হচ্ছে।’’