ঝাঁ-চকচকে: নেতুরার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার। নিজস্ব চিত্র
ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। বরাদ্দ না মেলায় ইচ্ছে থাকলেও ছাদ সংস্কার করা যায়নি। তবে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের সম্মিলিত সাহায্যে ভোল বদলেছে ঝাড়গ্রামের আগুইবনি পঞ্চায়েতের নেতুরা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টি শৌচাগারের। দেওয়াল ও মেঝেতে দৃষ্টিনন্দন টাইলস্ বসানো ছাড়াও রয়েছে ঝকঝকে ইউরিন্যাল ও শৌচাগার-প্যান। বাইরের দেওয়ালে রয়েছে শৌচাগার ব্যবহারের বার্তাও। বরাদ্দ মিললে ক্লাসঘরের সংস্কার কাজও হবে বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
নেতুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিচার-ইনচার্জ সুব্রত বৈদ্য জানালেন, স্কুলের শৌচাগার সংস্কারের জন্য কয়েক মাস আগে সর্বশিক্ষা মিশন থেকে দশ হাজার টাকা অনুদান পাওয়া গিয়েছিল। স্কুলের দু’টি শৌচাগারের ভোলবদলের ইচ্ছে ছিল অনেক দিন ধরেই। এগিয়ে আসেন স্থানীয় শিক্ষাবন্ধু ত্রিদিবেশ পাত্র। ত্রিদিবেশবাবুর মধ্যস্থতায় স্থানীয় ও ঝাড়গ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ব্যবসায়ীরা কিছু উপকরণ দিয়ে সাহায্য করেন। অভিভাবক-সভায় নিজেদের ইচ্ছের কথা জানান সুব্রতবাবু। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকরাও সাধ্যমতো অর্থ সাহায্য করেন। সব মিলিয়ে ৩৮ হাজার টাকা খরচ করে দু’টি শৌচাগারে সংস্কার কাজ হয়েছে।
আর পাঁচটা প্রাথমিক স্কুলে যেখানে অনেক সময় ছাত্র, ছাত্রীদের আলাদা শৌচাগারও থাকে না, সেখানে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে এমন শৌচাগার তৈরির উদ্যোগ নজিরবিহীন বলেই মানছে প্রাথমিক শিক্ষা দফতরও।
নেতুরার এই স্কুলে পুরনো শৌচাগার দু’টিতেও স্যাঁতসেঁতে অস্বস্তিকর পরিবেশ ছিল। সংস্কারের পর গত সোমবার সরস্বতী পুজোর দিনে নবরূপে শৌচাগার দু’টির ব্যবহার শুরু হয়েছে। খুদে পড়ুয়া অপূর্ব, আকাশ, রুমা, রিয়া, সঙ্গীতারা জানায়, “আগে শৌচাগারে ঠিকমতো জল যেত না। দুর্গন্ধে অস্বস্তি হত। এখন আমাদের স্কুলের শৌচাগার দেখতে আশে পাশের গ্রামের লোকজন আসছেন।”
শৌচাগার তৈরি তো হল, তবে সেটা রক্ষণাবেক্ষণ না করলে তো ফের অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে পালা করে রোজ শৌচাগার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে পড়ুয়ারা। প্রতি ক্লাসে শৌচাগার ব্যবহারের উপযোগিতা নিয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করা হয়। বাড়ি গিয়ে পড়ুয়ারাও অভিভাবকদের সচেতন করে। অভিভাবক সমীর খিলাড়ি, মহেন্দ্র গিরিদের কথায়, “এমন ভাল উদ্যোগের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমাদেরও ভাল নাগছে।”
তবে স্কুলে সমস্যাও রয়েছে অনেক। গত সেপ্টেম্বর মাসে স্কুলের শিশু শ্রেণিকক্ষের ছাদের চাঙড় খসে গিয়েছে। যে কোনও সময় পুরো ছাদটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পুরো ছাদটি ভেঙে সংস্কারের জন্য বড় অঙ্কের বরাদ্দের প্রয়োজন। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রশাসনিক স্তরে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও ভবনটির ছাদ সংস্কারের জন্য
বরাদ্দ মেলেনি। বাধ্য হয়ে আতঙ্কের ছাদ মাথায় নিয়ে ক্লাস করে শিশু শ্রেণির পড়ুয়ারা।
স্কুলের সীমানা প্রাচীর থাকলেও এক চিলতে জায়গায় পড়ুয়াদের খেলার জায়গা নেই। জায়গার অভাবে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের ডাইনিং রুম তৈরির বরাদ্দ ফিরে গিয়েছে। স্কুলের টিচার ইনচার্জ সুব্রত বৈদ্য ও সহ শিক্ষক-সহ শিক্ষিকা গৌরাঙ্গ বারিক, সুমিত্রা সিংহ ও নিবেদিতা পালের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গোটা স্কুল বাড়ির দেওয়ালে লেখায়-ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পাঠ্যবইয়ের নানা বিষয়বস্তু ও সমাজ সচেতনতামূলক নানা শ্লোগান। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে স্কুলে এলইডি টিভি কেনা হয়েছে। অডিও ভিস্যুয়াল পদ্ধতিতে শিশু পড়ুয়াদের পড়ানো হয়।
ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এমন উদ্যোগে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবেন।” শিশু শ্রেণির ক্লাস ঘরের ছাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।