মনোরঞ্জন মাহাতো (বাঁ দিকে) ও সুভাষ মাহাতো (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
আশঙ্কাই সত্যি হল! মকর পরবের রাতে হাতির হানায় জোড়া মৃত্যু হল ঝাড়গ্রাম জেলায়। গুরুতর জখম হলেন আরও একজন।
বুধবার রাতে ঝাড়গ্রাম শহরের মেহেরাবাঁধ শ্মশানে হানা দেয় হাতি। পালাতে গিয়ে শহরের রাস্তায় হাতির পায়ের তলায় পিষে মৃত্যু হল শ্মশানযাত্রী সুভাষ মাহাতো (৪০)-র। তাঁর বাড়ি বাঁধগোড়া অঞ্চলের ধূলাভুড়রিতে। ওই রাতেই নুনিয়াকুন্দ্রিয়া গ্রামে আগুন পোহানোর সময়ে হাতির হানায় প্রাণ হারান স্থানীয় মনোরঞ্জন মাহাতো (৩৪)। মকর পরবের রাতেই জামবনির কপাটকাটা গ্রামে হাতি ঢুকে পড়ায় জখম হলেন ভীম হাঁসদা। তিনি ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি।
ঝাড়গ্রাম শহরে আগেও হাতি ঢুকেছে। তবে হাতির হানায় শহরের রাস্তায় মৃত্যু এই প্রথম। বুধবার রাতে মেহেরাবাঁধ শ্মশানে সহকর্মীর কাকিমার শবদাহ করতে গিয়েছিলেন ধূলাভুড়রি গ্রামের সুভাষ। জুবিলি বাজারে মুদির দোকানে কাজ করতেন তিনি। সেখানেই কাজ করেন বেনাগেড়িয়ার সুকুমার মাহাতো। সুকুমারের সম্পর্কিত কাকিমা সরস্বতী মাহাতোর মৃত্যু হয় বুধবার। দাহ শেষ হতে রাত তিনটে বেজে যায়। সুকুমার জানালেন, চিতার আগুন নেভাতে তখন জল ঢালা হচ্ছিল। আচমকাই হাতি আসে। জনা পনেরো শ্মশানযাত্রীর কয়েকজন মেহেরাবাঁধ পুকুরে ঝাঁপ দেন। বাকিরা পিচ রাস্তা ধরে ছুটতে থাকেন। সুভাষ ছুটতে গিয়ে পড়ে গেলে হাতিটি তাঁকে নাগালে পেয়ে যায়। সুভাষের স্ত্রী পদ্মাবতীর আক্ষেপ, ‘‘শ্মশান থেকে ফিরে পুরপিঠে খাবেন বলে গিয়েছিলেন। পিঠে পড়েই রইল।’’
বৃহস্পতিবার রাতেও শহরের চিত্রেশ্বরপল্লিতে প্রস্তাবিত মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া বনসৃজন প্রকল্পের বাগানে ঢুকে পড়ে একটি হাতি। পুলিশ ও বনকর্মীরা তাকে খেদানোর চেষ্টা করছেন। হুটার বাজিয়ে টহল দিচ্ছে বন দফতরের ‘ঐরাবত’ গাড়ি।
মকরের রাতেই নুনিয়াকুন্দ্রি গ্রামে পিঠেপুলি খেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বসে আগুন পোহাচ্ছিলেন রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে মনোরঞ্জন মাহাতো। গ্রামে হাতি ঢুকে সকলে ছুটে দেন। বাঁশঝাড়ের দিকে গিয়ে আড়াল হতে গিয়েছিলেন মনোরঞ্জন। কিন্তু সেখানেও একটি হাতি ছিল। সে-ই মনোরঞ্জনকে শুঁড়ে তুলে আছড়ে পায়ে পিষে দেয়। ডিএফও বাসবরাজ হলেইচ্চি বলেন, ‘‘দুই মৃতের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর শহরে যাতে হাতি ঢুকতে না পারে সে জন্য বন দফতরের বিশেষ দল নজরদারি চালাচ্ছে।’’