ধৃত মনোব্রত জানার বাড়ির পাশের পাড়ায় চলছে চুল ছাড়ানোর কাজ। নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকে শুরু হত কাজ— চুলের গোড়া পরিষ্কার করা, সোজা করে তা থরে থরে সাজিয়ে রাখা। পরচুলা তৈরি হয় তো এলাকায়! সপ্তাহখানেক আগের একটি ঘটনা গ্রামবাসীর ওই দৈনন্দিন রুটিনে বদল এনেছে। চেনা কাজের বদলে রয়েছে অন্য ব্যস্ততা।কাজ থামিয়ে শুধু কথা বলতে হচ্ছে পুলিশ আর সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে!
ভূপতিনগরের নাড়ুয়াবিলা গ্রামে অন্তত ১০০টি পরিবারের বসবাস। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দায় চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত। গ্রামবাসীদের মধ্যে আর্থিক অস্বচ্ছলতার ছাপ স্পষ্ট। সংসারের হাল ফেরাতে গ্রামের ৩০টিরও বেশি পরিবারের বহু মহিলা সম্প্রতি পরচুলা পরিষ্কার করার কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এক সপ্তাহ পরপর পরচুলার কাঁচামাল সরবরাহ করেন এজেন্টরা। মাথাপিছু ২৫০ গ্রাম চুল সোজা করতে পাঁচ থেকে ছ’দিন সময় লাগে। সে জন্য ২৮০ টাকা করে দেওয়া হয় মহিলাদের। সপ্তাহখানেক ধরে ওই কাছে ঘটেছে বিঘ্ন।
গত ৬ এপ্রিল নাড়ুয়াবিলায় তৃণমূলের বুথ সভাপতি মনোব্রত জানাকে বিস্ফোরণ কাণ্ডে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। ওই দিনই এনআইএ আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর সময় গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির পরে লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে নাড়ুয়াবিলায় এনআইএ আধিকারিকের আক্রান্ত হওয়া শোরগোল পড়েছে রাজ্য থেকে কেন্দ্রে। আর ওই ঘটনার পরেই স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন হয়েছে মনোব্রতর পাড়ার বাসিন্দা বর্ণালী, রিঙ্কি, লতাদের।
এরা সকলেই পরচুলা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বর্ণালী মান্না বলছেন, ‘‘পাশের ব্লক থেকে এক ব্যবসায়ী বাড়ি বাড়ি চুল দিয়ে যেতেন। সেই চুল পরিষ্কার করে প্রতিমাসে হাজার খানেক টাকা পেতাম। কিন্তু, শনিবার থেকে সেই কাজটুকু বন্ধ রাখতে হয়েছে।’’ কিন্তু, কেন? ওই মহিলার কথায়, ‘‘কখনও পুলিশের লোকজন আসছেন। আবার কখনও সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা আসছেন। জানতে চাইছেন এনআইএ আধিকারিকদের সঙ্গে কী ঘটেছিল! বারবার এরকম ঘটলে কাজ করব
কী করে?’’
বর্ণালীর বাড়ির অদূরেই গায়েন পাড়া। বাড়ির পিছনে দাঁড়িয়ে পরচুলার বর্জ্য পরিষ্কার করছিলেন এক মহিলা। তিনিও বললেন, ‘‘কী যে হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না। যাঁরা কাজ দিয়ে যেতেন, তাঁদের বলেছি কয়েকদিন কাজ নেব না।’’ পাড়ায় একটি মন্দির রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি খাটুয়া পরিবারের বসবাস। তাদের এক মহিলা সদস্য বলছেন, ‘‘পাশের ব্লক থেকে এজেন্ট এসে স্থানীয় এক দিদিকে পরচুলার কাঁচামাল দিয়ে যেতেন। তাঁদের বাড়ি থেকে ওজন করে নিয়ে এসে পরিষ্কার করে আবার ওই বাড়িতেই জমা দিয়ে আসতাম। কিন্তু তিনি এখন ব্যস্ত থাকবেন। তাই সেই দায়িত্ব নিতে পারবেন না
বলে জানিয়েছেন।’’
নাড়ুয়াবিলার ওই বুথের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য রিঙ্কি প্রামাণিক। তিনি বলছেন, ‘‘গত দু'বছর ধরে গ্রামে শান্তি ছিল। একটা পুরনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি যেভাবে এনআইএকে কাজে লাগিয়ে গোটা গ্রামকে অশান্ত করে তুলল, তাতে সকলের জীবন জীবিকা বিঘ্নিত হচ্ছে।’’ জীবিকায় প্রভাব পড়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি অবশ্য বলছেন, ‘‘এনআইএ যাঁদের গ্রেফতার করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই দাগী দুষ্কৃতী। ওঁদের কথা না শুনে গ্রামের লোকেদের নিজের মতো করে জীবিকা অর্জনের জন্য ব্যস্ত
থাকা উচিত।’’