মাথায় ব্যান্ডেজ এএসআই-এর।
ফের বিজেপি-তৃণমূল গোলমালে উত্তপ্ত হল ভগবানপুরের মহম্মদপুর এলাকা। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন এক পুলিশ আধিকারিক। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে নিহত তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধানের ভাই পিন্টু প্রধানের।
অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে মহম্মদপুর-১ পঞ্চায়েতের পশ্চিমবাড় গ্রামের বাসিন্দা বিজেপি কর্মী এক দম্পতিকে তৃণমূলের লোকজন জোর করে পাশের উত্তরবাড় গ্রামে একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করে। রাতেই খবর পেয়ে ভগবানপুর থানার এএসআই অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী –সহ পুলিশের একটি দল আক্রান্ত ওই দম্পতিকে উদ্ধার করতে যান। সেই সময়েই পিন্টুর নেতৃত্বে তৃণমূলের লোকজন ওই পুলিশ কর্তাকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশবাহিনী গিয়ে আহত এএসআই এবং ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে। আহত বিজেপি সমর্থক নিতাই প্রামাণিক ও তাঁর স্ত্রী রাধারানিকে প্রথমে ভগবানপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে নিতাইকে তমলুক জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আহত পুলিশ কর্তার চিকিৎসা করানো হয়েছে। বুধবার রাত পর্যন্ত বিজেপির তরফে এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করা হয়নি বলে দলীয় সূত্রে খবর। তবে পুলিশের উপরে আক্রমণের ঘটনায় পুলিশের তরফে স্বতঃপ্রণোজিক ভাবে মামলা করা হয়েছে। তাতে ঋজু বর্মন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকায় সে তৃণমূল তথা পিন্টুর লোক হিসেবে পরিচিত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মহম্মদপুর এলাকায় মঙ্গলবার পুলিশ টহল দেওয়ার সময়ে একটি জায়গায় লোকজনের জমায়েত দেখে এগিয়ে গেলে জমায়েক থেকে একজন পুলিশকে আক্রমণ করে। ওই ঘটনায় একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয়েছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে তদন্ত চালানো হচ্ছে। তবে অভিযুক্তরা কোন রাজনৈতিক দলের তা জানা যায়নি।’’
জোর করে চাষের জমিতে ভেড়ি তৈরি নিয়ে এলাকার মানুষের ক্ষোভের জেরে ২০১৮ সালে ২৪ জানুয়ারি খুন হন তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধান। ওই ঘটার পর জোর করে ভেড়ির জন্য যাঁদের জমি নেওয়া হয়েছে, তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন নান্টুর বাবা চাঁদহরি প্রধান। ক্রমে নান্টুবিহীন এলাকায় প্রভাব বাড়তে থাক বিজেপির। গত ১১ জানুয়ারি মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরে ঢুকে চাঁদহরিকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় সূত্রে ঘটনার পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব উঠে এলেও বিজেপির বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ওঠে। তারই জেরে হিসাবে দু’দিন পরেই ১৩ জানুয়ারি পশ্চিমবাড়ে ভগবানপুর-১ ব্লকে বিজেপির পূর্ব মণ্ডলের সভাপতি রাকেশ মাইতির বাড়িতে হামলা এবং মহিলাদের মারধরের অভিযোগ ওঠে নান্টুর ভাই পিন্টু প্রধানের বিরুদ্ধে। তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যেই লড়াইকেই এলাকায় অশান্তির কারণ বলে দাবি করে পুলিশ। তারপরেই ফরে এই ঘটনা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মহম্মদপুর-১ পঞ্চায়েতের কাঁটাখালি গ্রামের বাসিন্দা নিতাই প্রামাণিক এলাকায় বিজেপি কর্মী হিসেবে পরিচিত। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টা নাগাদ তৃণমূল নেতা পিন্টু প্রধানের অনুগামী একদল লোক পশ্চিমবাড় গ্রামে নিতাইয়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে জোর করে পাশের উত্তর বাড় গ্রামে নিয়ে গিয়ে একটি ঘরে আটকে রেখে মারধর করে বলে অভিযোগ। মারধরে গুরুতর জখম হন নিতাই। তাঁর স্ত্রীকেও হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। রাতেই স্থানীয় বিজেপি নেতারা ভগবানপুর থানায় অভিযোগ জানান এবং ওই দম্পতিকে উদ্ধারের দাবি জানান। অভিযোগ পেয়ে ভগবানপুর থানার এএসআই অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী সহ কয়েকজন পুলিশ কর্মী উত্তরবাড় গ্রামে পৌঁছন। অভিযোগ, পিন্টুর নেতৃত্বে তৃণমূলের লোকজন ওই পুলিশ কর্তা ও অন্যান্য পুলিশ কর্মীদের ঘিরে ধরে। তাঁদের মারধর করা হয়। মারের চোটে মাথা ফাটে এএসআই অনিরুদ্ধর। খবর পেয়ে ভগবানপুর থানা থেকে আরও বাহিনী গিয়ে আক্রান্ত ওই পুলিশ আধিকারিক ও বিজেপি কর্মীকে উদ্ধার করে।
বিজেপির জেলা (তমলুক) সভাপতি নবারুণ নায়েকের অভিযোগ, ‘‘মহম্মদপুর এলাকায় বিজেপি কর্মীদের উপর পিন্টু প্রধানের নেতৃত্বে প্রায় প্রতিদিন হামলা চালানো হচ্ছে। মঙ্গলবার আমাদের এক কর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে সস্ত্রীক তুলে নিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে। আমরা পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের উপরেও আক্রমণ করে পিন্টু ও তাঁর দলবল।’’
তৃণমূল জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর দাবি, ‘‘বিজেপি কর্মীর উপরে তৃণমূলের লোকজনের আক্রমণের অভিযোগ ঠিক নয়। পারিবারিক বিবাদের জেরে ওই গোলমাল হয়েছিল। পুলিশকে আক্রমণের অভিযোগ শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’