বরাত এসেছে কম। হতাশা গোয়ালতোড়ের কুমোরপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
ঘুম কেড়েছে কুমোরটুলি। গ্রামের মৃৎশিল্পীদের টান পড়ছে রুজিতে।
কয়েকবছর আগেও পুজো এলে নাওয়াখাওয়া ভুলতেন গোয়ালতোড়, গড়বেতার মৃৎশিল্পীরা। রাত জেগে হ্যাজাক বা চার্জারের লাইট জ্বেলে চলত প্রতিমা গড়ার কাজ। লম্ফ জ্বালিয়ে শুকোনো হত প্রতিমার রং। আর এখন? এইসব অঞ্চলের মৃৎশিল্পীরা বলছেন, কুমোরটুলিই তাঁদের ভাবিয়ে তুলছে। কীভাবে? গোয়ালতোড়ের একজন প্রবীণ মৃৎশিল্পীর ব্যাখ্যা, ‘‘চোদ্দ, পনেরো বছর আগেও গড়বেতার তিনটি ব্লকের বড় পুজোগুলিতে কুমোরটুলির প্রতিমা ভাবাই যেত না। এখন তো ২০-২৫ টি পুজো কমিটি কুমোরটুলি, কাঁথি বা ভিনজেলা থেকে হয় প্রতিমা আনছে, নয়তো সেখানকার মৃৎশিল্পী এনে প্রতিমা গড়াচ্ছে।’’
গোয়ালতোড, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোড এলাকার অধিকাংশ বড় পুজোতেই এখন কুমোরটুলি বা ভিনজেলার মৃৎশিল্পীদের গড়া প্রতিমা হচ্ছে। আমলাশুলি সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির সম্পাদক বরেন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা একবার কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা এনেছিলাম। এখন কয়েকবছর পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির শিল্পীই প্রতিমা করছেন।’’ হুমগড় সর্বজনীন পুজোয় এ বার কুমোরটুলির শিল্পীর প্রতিমা। পুজো কমিটির কর্তারা বললেন, ‘‘কুমোরটুলির প্রতিমার বিশেষ কদর আছে। তাই স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের বদলে কুমোরটুলির শিল্পীদের দিয়েই প্রতিমা গড়াচ্ছি।’’ চন্দ্রকোনা রোডের ডুকির অগ্রদূত ক্লাবের সর্বজনীন পুজোর কর্মকর্তা গৌতম ঘোষের কথায়, ‘‘কুমোরটুলির প্রতিমা দৃষ্টিনন্দন। তুলনায় গ্রামের শিল্পীদের প্রতিমা গতানুগতিক। তাই কুমোরটুলির শিল্পীর দিকেই ঝোঁক বাড়ছে আমাদের।’’
আগে গড়বেতার তিনটি ব্লকের স্থানীয় শিল্পীদের কাছে দুর্গাপ্রতিমার বরাত দেওয়া হত দেড়, দু’মাস আগে থেকেই। গোয়ালতোড়ের পিয়াশালা বাজারের বছর তিয়াত্তরের মৃৎশিল্পী সুবলচন্দ্র দে বলেন, ‘‘আগে পুজোর সময় দু’দণ্ড বসার ফুরসত পেতাম না। রোজগারও ভাল হত, অর্ডার কম পড়ায় এখন অনেক কমে গিয়েছে রোজগার।’’ গড়বেতার ঝাড়বনির প্রবীণ মৃৎশিল্পী ফটিক দে বলেন, ‘‘গ্রামের শিল্পীদের রুজিতে টান পড়ছে, যে হারে জিনিসের দাম বেড়েছে, সে হারে প্রতিমার দাম বাড়েনি। অর্ডারও কম পড়ছে।’’ প্রতিমা গড়েন হুমগড়ের মৃৎশিল্পী তারাশঙ্কর দে ও তাঁর স্ত্রী চম্পা দে। তাঁরা বলেন, ‘‘দুর্গাপ্রতিমার কয়েকটা অর্ডার পেলেও দামে পোষায় না। গ্রামের শিল্পীদের তো কদরই নেই।’’