আপনজন: মেদিনীপুর কলেজের ছাত্রদের মাঝে অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। শুক্রবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
তিনি শহরের গর্ব, দুঁদে অভিনেতা। মেদিনীপুরের সেই ভূমিপুত্রকে সম্ভবত এই প্রথম মেদিনীপুর কলেজের পড়ুয়ারা পেলেন কাছেরদাদাকে। অফুরাণ প্রাণশক্তিকে ভরা যে দাদার ঝুলিতে রয়েছে ‘অবসাদ’, ‘ক্লান্তি’, ‘সংশয়’, ‘দ্বন্দ্ব’-এর মতো শব্দগুলিকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়ার টোটকা। আর ঠিক সেই কারণেই কলেজের সভাঘরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে যখন তিনি বলছিলেন, ‘‘সংশয় এবং অবসাদকে ছোট করে দেখবেন না। ১০০ জ্বর দেখলে ভেঙে পড়েন? পড়েন না তো! একটা ওষুধ খান, ডাক্তার দেখান। ঠিক হয়ে যায়। সংশয়কেও কোনও দিন ছোট করে দেখবেন না। এটা কাউকে বলতেও লজ্জা পাবেন না যে, আমি দ্বিধায় রয়েছি...’’, সভাঘরে উপস্থিত পড়ুয়া-সহ বাকিরা তখন নিশ্চুপ। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মঞ্চের দিকে।
১৫০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠান চলছে মেদিনীপুর কলেজে। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই শুক্রবার কলেজে এসেছিলেন অভিনেতা-পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা প্রদ্যোত ভট্টাচার্য, জেঠু বিদ্যুৎ ভট্টাচার্যরাও। প্রদ্যোতবাবু এই কলেজেরই প্রাক্তনী। অনির্বাণ বলছিলেন, ‘‘আমার বাবা এই কলেজ থেকে যখন পাশ করেন, সেই বছর কলেজের একশো বছর পূর্তি ছিল, সেটা ১৯৭৩ সাল। দেড়শো বছর পূর্তিতে আমার বাবা মঞ্চে বসে আছেন। সন্তান হিসেবে এটা দেখা, এ রকম দৃশ্যের জন্ম কিন্তু বারবার হয় না।’’ এ দিন তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এই যে কলেজের সামনের রাস্তা, এ দিকে গোলকুঁয়াচক, ও দিকে সিপাইবাজার। এই সব জায়গায় আমি সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি বন্ধুদের নিয়ে। মেদিনীপুর মানে আমার কাছে আমার ছোটবেলার শহর, আমার মাটি। আমার বন্ধুত্বের শহর, ঘুরে বেড়ানোর শহর, পড়াশোনায় অমনোযোগের শহর। যা ইচ্ছে তাই করে জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া যায়, এই কথা ভাবার শহর।’’
অনির্বাণ মেদিনীপুর কলেজের ছাত্র নন, তবে এই কলেজের সঙ্গেও জুড়ে রয়েছে তাঁর স্মৃতি— মনে করান অভিনেতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি উচ্চ মাধ্যমিকে খুব খারাপ ফল করি। আর্টস নিয়ে পড়েছিলাম। কলকাতায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নাটক বিভাগ থেকে একটা ফর্ম তুলি। বাবা-মা, জ্যেঠু বলেছিলেন, ওখানে সুযোগ না পেলে একটা বছর নষ্ট হবে। তারপরই ঘটে মেদিনীপুর কলেজের সঙ্গে আমার সংযোগ। এই কলেজ থেকে দর্শনের বিষয়ের অনার্সের একটা ফর্মও তুলেছিলাম।’’
শুক্রবার কলেজে এসে পড়ুয়াদের সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছেন ‘মন্দার’-এর পরিচালক। মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র বেরা বলছিলেন, ‘‘মেদিনীপুরবাসী হিসেবে আমরা ওঁর জন্য গর্বিত। বাঙালি হিসেবেও গর্বিত।’’ এই শহরের রাস্তাঘাট, আলুকাবলি-ঘুগনির দোকানের কথা ফিরে ফিরে এসেছে অভিনেতার কথায়। অনুষ্ঠানের মাঝেই তাঁর ছবির কিছু সংলাপ শোনার আবদার করেন উৎসাহী পড়ুয়ারা। মুচকি হেসে অনির্বাণ উত্তর দেন, ‘‘সিনেমায় যেগুলো বলি, সেগুলো অন্য লোকের লেখা। আজ যেগুলো বললাম, সেগুলো আমারই লেখা, একেবারে হাতে-গরম।’’ এরপর অনুরোধ আসে গান গেয়ে শোনানোর। এ বার ‘দাদা’ ফেরাননি। মাইক হাতে অনির্বাণ গান ধরেন, ‘কিচ্ছু চাইনি আমি আজীবন, ভালবাসা ছাড়া...’।