বাসব রামবাবুর বাড়িতে হাজির অন্ধ্রপ্রদেশের মন্ত্রী সিদিরি আপ্পালা রাজু।
রেলশহরে ভোট রাজনীতিতে মাফিয়া মেরুকরণ বহু পুরনো। গত পুরভোটেও তৃণমূলের সঙ্গে মাফিয়া যোগের অভিযোগ উঠেছিল। আরও একটা পুরভোটের আবহে এ বার খড়্গপুরের জেলবন্দি রেলমাফিয়া বাসব রামবাবুর বাড়িতে হাজির অন্ধ্রপ্রদেশের মন্ত্রী সিদিরি আপ্পালা রাজু।
২০১৭ সালে আরেক রেলমাফিয়া তথা তৃণমূল কর্মী শ্রীনু নায়ডু খুনের মামলায় জড়িয়ে আপাতত জেলবন্দি রামবাবু। রবিবার মালঞ্চয় তাঁর বাড়িতেই আসেন আপ্পালা রাজু। ‘যুবজন শ্রমিক রাইথু কংগ্রেস পার্টি’ পরিচালিত অন্ধ্র সরকারের কৃষি ও পশুপালন মন্ত্রী তিনি। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগনমোহন রেড্ডির এই দল এনডিএ জোটে রয়েছে। শনিবার শহরে এসেছেন রাজু। প্রথম দিন যান বালাজি মন্দিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। শনিবার সন্ধ্যায় খড়্গপুরে তেলুগুদের সামাজিক সংগঠনের অনুষ্ঠানেও গিয়েছিলেন তিনি। আর রবিবার দুপুরে পৌঁছে যান রামবাবুর বাড়িতে। এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি অন্ধ্রের মন্ত্রী। যদিও রামবাবুর পরিজনেদের দাবি, পারিবারিক পরিচিতির সূত্রেই তাঁর এই আগমন। রামবাবুর মাসতুতো ভাই শ্রীনিবাস বলেন, “বৌদি (রামবাবুর স্ত্রী) অন্ধ্রপ্রদেশের পলাশার মেয়ে। আপ্পালা রাজুও পলাশা বিধানসভার বাসিন্দা। সেই সূত্রেই পারিবারিক পরিচিতি। উনি খড়্গপুরে এসেছেন। পুরপ্রধান-সহ অনেকে ওঁকে সম্মান জানিয়েছেন। আমরা বলেছিলাম একবার ঘুরে যান।”
রাজনৈতিক মহলে অবশ্য জল্পনা শুরু হয়েছে। ১৫ নম্বর রেলওয়ার্ডে তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলর অঞ্জনা সাকরেও এ দিন যান রামবাবুর বাড়িতে। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে ভাইয়ার (রামবাবু) পুরনো যোগাযোগ। মন্ত্রী আপ্পালা রাজুর সঙ্গেও এ দিন কথা হয়েছে। সে ভাবে রাজনীতির কথা নয়। তবে উনি জিজ্ঞসা করছিলেন কীভাবে কাউন্সিলর হলাম। বলেছি সব ভাইয়ার (রামবাবু) জন্য সম্ভব হয়েছে।”
গত বিধানসভা নির্বাচনে খড়্গপুরে জিতেছে বিজেপি। রেলওয়ার্ডের তেলুগু ভোটের অধিকাংশই গিয়েছে গেরুয়া শিবিরে। ফলে, পুরভোটের আগে এনডিএ জোটে থাকা দলের মন্ত্রীর শহরে আসা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরেও। তবে আপ্পালা রাজুর সঙ্গে শনিবার দু’টি অনুষ্ঠানে কথা বলতে দেখা গিয়েছে পুরপ্রশাসক তথা তৃণমূল নেতা প্রদীপ সরকারকে। প্রদীপের দাবি, “উনি একটি রাজ্যের মন্ত্রী। আমার শহরে এসেছেন। অনুষ্ঠানে সৌজন্য বিনিময় হয়েছে। উনি বলেছেন তেলুগুদের মুখে আমার প্রশংসা শুনেছেন। এমনকি দিদির সঙ্গে জগনমোহন রেড্ডি কাজ করতে চান বলেও বলছিলেন।” তবে রামবাবুর বাড়িতে ওই মন্ত্রীর যাওয়া নিয়ে প্রদীপের মন্তব্য, “এতে রাজনীতি থাকতেও পারে, না-ও থাকতে পারে। তবে আমরা বিষয়টি হাল্কাভাবে নিচ্ছি না। পুরভোটের সময়ে এ সবের উপর নজর রাখছি।” শহরের বাসিন্দা বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায়ের যদিও বক্তব্য, “রামবাবু রাজনীতির লোক নয়। আর পারিবারিক সম্পর্কের সূত্রে কেউ কারও বাড়িতে যেতেই পারেন।”