হাতির মৃতদেহ তোলা হচ্ছে ট্রাক্টরে। জোয়ালভাঙায় বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
ফের দাঁতালের মৃত্যু। এ বার হাতির দেহ মিলল ঝাড়গ্রাম ব্লকের শালবনি অঞ্চলের ভাউদা জঙ্গল লাগোয়া জোয়ালভাঙা গ্রামের আনাজ খেতের কাছে। পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী হাতিটির মৃত্যু নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। ময়নাতদন্তের পর প্রাথমিক ভাবে অবশ্য প্রাণী চিকিৎসকদের অনুমান, তড়িতাহত হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও পঙ্কজ সূর্যবংশীও মানছেন, ‘‘ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী তড়িতাহত হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। সেই মতো পদক্ষেপ হচ্ছে। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।’’ বন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাও বলছেন, ‘‘যদি তদন্তে দেখা যায়, কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে বৈদ্যুতিক তার বিছিয়ে রাখার কারণেই হাতিটি তড়িতাহত হয়ে মারা গিয়েছে, তা হলে বন দফতর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করবে।’’
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার ভোরে স্থানীয় বাসিন্দারা ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের লোধাশুলি রেঞ্জের ভাউদার জঙ্গল লাগোয়া একটি আনাজ খেতের কাছে হাতিটিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এলাকার জঙ্গলে প্রায়ই হাতিদের আনাগোনা রয়েছে। হাতির মৃত্যুর খবর চাউর হতেই ভাউদা, জোয়ালভাঙা, কলসিভাঙা, নুনিয়াকুন্দ্রি, ডাইনমারি, শিরষির মতো আশেপাশের গ্রামের লোকজন সেখানে ভিড় জমান।
বন দফতর সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম ও লোধাশুলি রেঞ্জের জঙ্গলে গত কয়েক দিন ধরেই ৭৯টি হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে ভাউদা লাগোয়া ঝাড়গ্রাম রেঞ্জের বাঁদরভুলা বিটে মঙ্গলবার ২৭টি হাতির দল ছিল। বনকর্মীদের অনুমান, মৃত হাতিটি ওই দলেরই। রাতে খাবারের সন্ধানে হাতিরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গ্রামের খেতে হানা দেয়। জোয়ালভাঙার ওই বিস্তীর্ণ জমিতে বরবটি চাষ হয়েছে। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বরবটি খেতের ঢোকার মুখেই জমির বড় আলে হাতিটি মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
বন দফতরের অনুমান, ফসল বাঁচাতে একাংশ চাষি রাতে জমির চার পাশে বিদ্যুৎবাহী তার বিছিয়ে রাখেন। তার ফলেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এ দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে বনকর্মীরা কোনও বৈদ্যুতিক তার বিছানো অবস্থায় দেখতে পাননি। এ দিন ঘটনাস্থলে যান এডিএফও (ঝাড়গ্রাম) পার্থ মুখোপাধ্যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাত হলেই জঙ্গল থেকে হাতিরা বেরিয়ে এসে ধান ও আনাজ খেত তছনছ করছে। বাড়ি-ঘর ভাঙছে।
বন দফতরকে বার বার জানিয়েও হাতি সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না। এ দিন প্রাণী চিকিৎসক চঞ্চল দত্ত ও সুলতা মণ্ডল এলাকায় গিয়ে মৃত হাতিটিকে পর্যবেক্ষণ করেন। সূত্রের খবর, হাতিটির শুঁড়ের একাধিক জায়গায় পোড়া দাগ দেখতে পান প্রাণী চিকিৎসকরা। এরপর হাতিটিকে পে-লোডার দিয়ে তুলে ট্রাক্টরে চাপিয়ে বাঁদরভুলা বিট অফিস চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়।