দোকানে ব্যস্ত কৃষ্ণগোপাল। নিজস্ব চিত্র
এক টাকায় এখন কী মেলে! একসময় বেশি আনাজপাতি কিনলে ধনেপাতা বিনা দামে দিয়ে দিতেন বাজারওয়ালা। সেই ধনেপাতাও এখন ৪-৫ টাকা আঁটি। এমন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যুগে এক টাকায় তেলেভাজা! একটা ‘আইটেম’ নয়। তিন তিনটি। চপ, দোপেঁয়াজি ও বেগুনি। ঐতিহ্য বজায় রাখতে গিয়ে এই অসাধ্য সাধন করেছেন পটাশপুরের কৃষ্ণগোপাল মাইতি। ভিড় লেগেই থাকে দোকানে।
পটাশপুর ও মংলামাড়ো রাজ্য সড়কের পাশে সরিদাসপুর (পাঁচুড়িয়া) বাসস্টপ। একচালা গুমটি দোকানে চপ ভাজেন কৃষ্ণগোপালবাবু। ২০০০ সালে কৃষ্ণগোপালবাবু তেলেভাজার দোকান করেন। গোপালসিংপুরে গ্রামের বাড়িতে তাঁর ঠাকুমার তেলেভাজার দোকান ছিল। ঠাকুমার দেখানো পথেই সংসারের হাল ধরতে তেলেভাজা বিক্রি শুরু। ব্যবসায় অভিনব প্রয়োগ, দাম এক টাকায় বেঁধে রাখা। শুরুতে এক টাকার চপ নিয়ে ক্রেতাদের তেমন চাহিদা ছিল না। হাল ছাড়েননি কৃষ্ণগোপাল। ধীরে ধীরে দোকানে উপচে পড়তে থাকে ক্রেতা। বিয়ে থেকে জামাইষষ্ঠী, এলাকার লোকজন মিষ্টির পরিবর্তে এক টাকার চপ নিয়ে যান। চপ কিনতে ভিড় করেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। একটু সময় পেলে বাসযাত্রীরা তেলেভাজা কিনতে নেমে পড়েন। পথচলতি বা অফিস ফেরত লোকজন গাড়ি থামিয়ে চপ কেনেন। কম টাকায় তেলে ভাজা পাওয়ায় রিকশা চালক থেকে ব্যবসায়ী, এখানে সকালের জলখাবার খান।
গত ২২ বছরে তেল, বেসন ও মশলাপাতির দাম বেড়েছে। কিন্তু চপের আকার আগের মতোই রয়েছে। বিক্রিও বেড়েছে। আগে ছেলে চণ্ডীচরণ পড়াশোনার ফাঁকে বাবার দোকান সামলেতেন। এখন পুরোপুরি বাবার সঙ্গী। সকাল-বিকেল দোকানে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন পড়ে। একা হাতে সামলান চণ্ডীচরণ। কাঠের আগুনের আঁচে চপ, দোপেঁয়াজি ভাজেন কৃষ্ণগোপালবাবু। তেলেভাজার স্বাদ ও গুণমান বজায় রাখতে নিজের হাতে মশলা ও আলুর পুর তৈরি করেন। ‘এক টাকার চপওয়ালা’ কৃষ্ণগোপালবাবুর স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প এলাকার মানুষের মুখে ঘোরে। টোটোচালক হরিপদ দাস বলেন ‘‘এত কম টাকায় সুস্বাদু চপ, দোপেঁয়াজি, বেগুনি কোথাও পাওয়া যাবে না। এখানে কম টাকায় সকাল বিকেল নাস্তা করি আমরা। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এই দোকানে এক টাকায় তেলে ভাজা কিনতে আসেন।’’
কৃষ্ণগোপালবাবু বলেন ‘‘দোকানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ক্রেতাদের স্বার্থে দ্রব্যমূল্যের বাজারেও এক টাকার চপ বিক্রি করি। বেশি বিক্রি হওয়ায় মোটের উপর একটা লাভ্যাংশ থাকে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই দোকানে তেলেভাজা নিতে আসেন। কম টাকায় ক্রেতাদের খুশি করে আমিও খুশিতে থাকি।’’ প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার তেলেভাজা বিক্রি হয়। দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে এক টাকার চপ বিক্রি করেও স্বচ্ছল হয়েছেন। গুমটি দোকানের পিছনে জায়গা কিনে পাকা দোকান ঘর তৈরির কাজ চলছে।
কী ভাবে লাভ থাকে এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে? একটা হিসেব দিলেন কৃষ্ণগোপালবাবু। ১০টা তেলেভাজা বিক্রি করলে গড়ে তিন টাকা লাভ থাকে। সেই হিসেবে শতকরা ৩০ টাকা লাভ হয়। প্রতিদিন আড়াই হাজার চপ বিক্রি করলে সেই লাভ্যাংশ গিয়ে দাঁড়াবে ৭৫০ টাকায়। এক টাকা দাম হওয়ায় ক্রেতারা গড়ে ১০-২০ টাকার তেলেভাজা কেনেন। সেই অনুপাতে বেশি বিক্রি হয়। তাঁর দোকানে চা, পান, ঘুগনি মুড়িও বিক্রি হয়।
কৃষ্ণগোপালবাবুর তেলেভাজার জনপ্রিয়তার কারণে অনেকের কাছে বাসস্টপটি ‘এক টাকার চপের বাসস্ট্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত।