ভোট চাইতে গিয়ে এক ফ্যাসাদে পড়ছেন তৃণমূল প্রার্থী। তবে শুধু তিনি নয়, সঙ্গে দলের কর্মী-সমর্থকরাও। যতই সেতু, রাস্তা-এমন নানা কাজের খতিয়ান ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন প্রার্থী, ততই ভোটাররা বলছেন, ‘‘এ আর নতুন কী। এই কাজ তো হতই। এটার জন্য আবার প্রচার কীসের?’’
তাহলে দাসপুরের বাসিন্দাদের দাবি কি?
দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয়দের দাবি ছিল, এলাকায় স্বর্ণশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হোক। সেখানে এলাকার যুবকেরা সোনার বিভিন্ন গহনা তৈরির প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। আর সেটাই রোজগারের পথ খুলে দেবে। কিন্তু তা হয়ে উঠেনি। হয়নি সব্জি সংরক্ষণ কেন্দ্রও। এটাও বহু দিনের দাবি ছিল। ছিল ফুলের একটি বাজার তৈরির দাবিও। কিছুই হয়নি। এতেই ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা।
এ বার ক্ষমতায় এসেই আগে এলাকার সিংহভাগ ভোটারদের এই সব চাহিদাগুলি মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট বৈতরণী পার করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভিজছে না। স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে শাসক শিবির। ভোট প্রচারে বেরিয়ে প্রায় সিংহভাগ বাড়িতে ভোটারদের কাছে এই সব কথা শুনতে হবে-তা স্বপ্নেও ভাবেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের এক যুব নেতা তো কবুলও করলেন সে কথা। বললেন, “ভোটের সময় বাড়ি বাড়ি প্রচারই বেশি করি। এ বার অনেকে তো আমাদের মুখের উপর বলেই দিলেন ভোট দিয়ে কী লাভ।”
মানুষের দাবি যে ন্যায্য-তাও মানছেন শাসক দলের নেতরা। দলের দাসপুর-১ব্লকের কোর কমিটির এক সদস্যের কথায়, “দাসপুরে সোনা ও সব্জির জন্যই এত উন্নতি। এখানে মানুষের ওই সব দাবিগুলি পূরণ করা উচিত ছিল। দলেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। ভোট মিটলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে।” তিনি আরও বলেন, “ভোটাররা বলছেন,এই সব কাজ তো স্বাভাবিক নিয়মেই হবে। এটা প্রচার করার কী প্রয়োজন?” মুখের সামনে এমন জবাব কী করেই বা হজম করবেন শাসকদলের নেতারা?
ঘাটাল মহকুমার তিনটি বিধানসভার মধ্যে দাসপুরে দলের কোন্দল আবার অন্য রকম। এখানে দলের দাসপুর-২ ব্লক সভাপতি তপন দত্ত সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। যদিও দলের চাপেই তপন দত্ত দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নেমেছেন পুরোদমে। কিন্তু,তাতেও স্বস্তিতে নেই বিধায়ক অনুগামীরা। কেননা,দেবের মতো একজন হেভিওয়েট তারকা সাংসদ তপন দত্তের খাসতালুকে গিয়েও দলের কোন্দলের আঁচ পেয়েছেন।
প্রতিশ্রুতি দিয়েও উন্নয়ন না হওয়ার সঙ্গে দলের কোন্দলে জেরবার তৃণমূল শিবির। ভোট কাটাকাটি হওয়ার সম্ভবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না শাসক শিবির। এ বার দাসপুর বিধানসভায় তৃণমূল, সিপিএম জোট ছাড়াও বিজেপি ও এসইউসি প্রার্থীও রয়েছে। তবে লড়াই হবে তৃণমূলের সঙ্গে জোট প্রার্থীর। বিজেপির সংগঠন নেই বললেই চলে। ভোট কাটাকাটি হলে লাভ হবে জোট প্রার্থীরই।
যদিও অঙ্কের হিসাবে এগিয়ে তৃণমূলই। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট প্রার্থী অজিত ভুঁইয়া ৫৪.৭৬ শতাংশ। বামেরা পেয়েছিল ৪২.২৪ শতাংশ। বিজেপির দখলে ছিল ৩ শতাংশ। সে বার অজিতবাবু ২৪ হজার ৯২৭ টি ভোটে সুনীল অধিকারীকে পরাজিত করেছিলেন। অজিতবাবুর মৃত্যুর পরই ২০১২ সালেই ফের দাসপুরে উপ-নিবার্চনও হয়। প্রার্থী হন অজিত বাবুর স্ত্রী মমতা ভুঁইয়া।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে দাসপুর বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী (দেব) পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ৬ হাজার ২০৩টি ভোট। সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণা পেয়েছিলেন ৬৯ হাজার ২টি ভোট।বিজেপির ভোট একটু বেড়েছিল। শতাংশের হিসাবে তৃণমূলের দখলে ছিল ৫৩.৯৯ শতাংশ।আর বামেদের ছিল ৩৫.০৭ শতাংশ। কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া পেয়েছিলেন৪ হাজার ৩৩৪টি ভোট। শতাংশের হিসাবে কংগ্রেসের দখলে ছিল ২.১৯ এবং বিজেপি পেয়েছিল ৭.২৩ শতাংশ।
যদিও এই সব ক্ষোভ-সমীকরণকে পাত্তা দিতে নারাজ শাসক দলের প্রার্থী মমতা ভুঁইয়া। সাফ কথা, “আমি দিদিকে বলে এক বছরের মধ্যেই আগে এই তিনটি কাজ করবই। ভোটারদেরও আমি নিজেও বলছি।” সাধারণ মানুষের এই ক্ষোভকেই কাজে লাগাতে মরিয়া সিপিএম জোট। দাসপুর বিধানসভার জোট প্রার্থী স্বপন সাঁতরা বলেন, “আমরাই এটা বুঝে বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে সব্জি সংরক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছিলাম। কিন্তু যদিও সেটা এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এবার ক্ষমতায় এলেই আগে এলাকার চাহিদা গুলি মেটানোর চেষ্টা করব।” স্বপন বাবু আরও বলেন, “ সাধারণ মানুষ বুঝে গিয়েছেন, তৃণমূলের সবই ভাঁওতা। তাই কোনও প্রতিশ্রুতিই আর কাজে আসবে না।” মমতা দেবীর এই ‘প্রতিশ্রুতিকে’ ভোটাররা মান্যতা দেয় না মুখ ফিরিয়ে নেয়-এখন সেটাই দেখার।