বিনপুর পঞ্চায়েতের প্রধান প্রতিমা পাত্র (বাঁ দিকে)। তৃণমূলের বিনপুর অঞ্চল সভাপতি: যদুনাথ কিস্কু (ডান দিকে)। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গোপন-টেন্ডার করার অভিযোগ তুলেছেন দলেরই অঞ্চল সভাপতি। দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে বিডিওর কাছে লিখিত নালিশও ঠুকে দিয়েছেন ওই নেতা। উন্নয়ন কাজের টেন্ডারকে ঘিরে বিনপুর-১ ব্লকের বিনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেআব্রু হয়ে পড়েছে।
তৃণমূলের বিনপুর অঞ্চল সভাপতি যদুনাথ কিস্কু-র অভিযোগ, পঞ্চায়েতে উন্নয়ন-কাজের যাবতীয় টেন্ডার গোপনে করা হচ্ছে। বিনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রতিমা পাত্র পঞ্চায়েত আইনকে উপেক্ষা করে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য একেবারে স্বেচ্ছাচার ও স্বজনপোষণ চালাচ্ছেন। সরকারি উন্নয়নের টাকা আত্মসাত করা হচ্ছে। এলাকার প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে না। সোমবার (৩১ অগস্ট) প্রতিমাদেবীর বিরুদ্ধে বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন যদুনাথবাবু। অভিযোগপত্রে যদুনাথবাবু দাবি করেছেন, গত অগস্টে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার বিভিন্ন নির্মাণ সংক্রান্ত কাজের টেন্ডার গোপনে করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনও তথ্যই তাঁকে জানাতে চাইছেন না প্রধান। যদুনাথবাবুর দাবি, গত ১০ অগস্ট ‘এলাকার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন’ ঠিকাদারদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পঞ্চায়েত প্রধান প্রতিমাদেবী তাঁকে কোনও তথ্য দিতে চান নি। ফের ২৪ অগস্ট যদুনাথবাবু পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে হম্বিতম্বি করলে প্রধান, সচিব ও নির্মাণ সহায়ক-রা জানান যে, টেন্ডার ফর্ম দেওয়া হয়ে গিয়েছে। যদুনাথবাবুর অভিযোগ, ওই টেন্ডারের ব্যাপারে এলাকার কেউই জানেন না। পঞ্চায়েত অফিসের বোর্ডেও কোনও নোটিশ টাঙানো হয়নি। পছন্দের ঠিকাদারকে গোপনে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার জন্য প্রধান ও তাঁর পারিষদরা উঠে পড়ে লেগেছেন।
যদুনাথবাবুর আরও অভিযোগ, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৪৯টি কাজের টেন্ডার হয়েছিল। ওই কাজ গুলির অধিকাংশই শেষ হয়নি। কিন্তু ঠিকাদাররা প্রধানকে সন্তুষ্ট করে বিলের পেমেন্ট পেয়ে গিয়েছেন। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য বিডিও-র হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন যদুনাথবাবু। মঙ্গলবার যদুনাথবাবু বলেন, “বিনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩টি গ্রাম সংসদ এলাকায় উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রামোন্নয়ন কমিটির মতামতকে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না। প্রধান ও তাঁর পারিষদরা এক তরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। গোপনে টেন্ডার করে গুটিকয় পছন্দের বহিরাগত ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানের এই স্বেচ্ছাচার ও স্বজনপোষণের ফলে এলাকায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বিডিও-কে অভিযোগ দিয়ে উপযুক্ত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দাবি করেছি।”
এতদিন পরে হঠাত্ করে কেন অভিযোগ করলেন? যদুনাথবাবুর জবাব, “বিধানসভা ভোট দোরগোড়ায়। মানুষের কাজ না করে দলের জনপ্রতিনিধি নিজের উন্নয়ন ও স্বার্থসিদ্ধি করছেন, এতে তো দলেরই ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দলের স্বার্থেই প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। সত্য তো আর অস্বীকার করতে পারব না।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, বিনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষমতার ভাগাভাগি ঘিরে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট সদস্য ১৩ জন। তৃণমূলের সদস্য ১২। সিপিএম সদস্য ১। এর মধ্যে প্রধান-সহ শাসক দলের সিংহভাগ পঞ্চায়েত সদস্য যুব তৃণমূলের ব্লক সহ-সভাপতি জলধর পণ্ডার অনুগামী। পঞ্চায়েতের কাজকর্মে জলধরবাবুর রীতিমতো প্রভাব রয়েছে। অন্যদিকে, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি যদুনাথবাবুর সেই অর্থে পঞ্চায়েতে কোনও প্রভাব নেই। বিষয়টি অনুধাবন করে কয়েক মাস আগে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য দলীয়স্তরে একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়। যদুনাথবাবুকে কমিটির মাথায় বসানো হয়। কিন্তু পঞ্চায়েতের কাজে অযথা দলীয় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে পাল্টা সোচ্চার হন প্রতিমাদেবী।
পঞ্চায়েত প্রধান প্রতিমাদেবীর বক্তব্য, “পদ্ধতি মেনেই টেন্ডার ডেকে উন্নয়ন-কাজ করা হচ্ছে। উন্নয়নের স্বার্থে কোনও দলীয় হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করিনি বলেই আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে।” জলধরবাবুর দাবি, “কে কী অভিযোগ করেছেন জানা নেই। তবে আমি যতটুকু জানি, পঞ্চায়েতের কাজকর্মে স্বচ্ছতা রয়েছে।”
তৃণমূলের বিনপুর-১ ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায় বলেন, “যদুনাথবাবু মৌখিক ভাবে আমাকে অভিযোগ করেছিলেন। তবে উনি যে বিডিও’র কাছে অভিযোগ করেছেন, সেটা আমাকে জানাননি। প্রধান দলের উর্ধ্বে নন, এ ধরনের অভিযোগ অবশ্যই দলীয়স্তরে খতিয়ে দেখা হবে।” বিনপুর-১ ব্লকের বিডিও জ্যোতিন্দ্রনাথ বৈরাগী বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”