প্রতীকী ছবি।
জেলার কলেজে কলেজে এখন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাপট। কোণঠাসা এসএফআই। সময়োপযোগী সংগঠন গড়ার দাবি উঠছে সংগঠনের অন্দরেই। তবে বেশিরভাগ জায়গাতেই নেতৃত্বের দুর্বলতা রয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মানছে এসএফআই-ও সংগঠনের জেলা সম্মেলনের দলিলে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে তাদের স্বীকারোক্তি, ‘সময়োপযোগী সংগঠন ছাড়া আমরা আমাদের রাজনৈতিক বোঝাপড়া কিছুতেই বৃহৎ অংশের ছাত্রদের কাছে নিয়ে যেতে পারবো না। জেলা কমিটি থেকে জোনালস্তর পর্যন্ত সীমাহীন দুর্বলতা ছিল। জেলা ভিত্তিক কর্মী বাছাই, তাদের নিয়ে সাধারণ সভা হলেও ২- ৩টি জোন বাদে বাকি জোনগুলোর অবহেলা ছিল।’ সিপিএমের ছাত্র সংগঠন মানছে, ‘অনেক কর্মী কিছু দিন উৎসাহের সঙ্গে কাজ করলেও সাংগঠনিক পরিকাঠামো গড়ে না তোলায় তাদের সংগঠনে আনা যায়নি। উত্সাহীদের কাজ দেওয়া, চেকআপ করায় ঘাটতি ছিল।’
এসএফআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন শেষ হয়েছে রবিবার। দু’দিনের এই সম্মেলনে ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস, রাজ্য সহ-সম্পাদক সৌগত পণ্ডা প্রমুখ। গত দু’বছর দু’মাসের কাজ পর্যালোচনা করতে গিয়ে নানা ব্যর্থতা মেনেছে এসএফআই। এখন পশ্চিম মেদিনীপুরে শুধুমাত্র চাঁইপাট কলেজের ছাত্র সংসদই এসএফআইয়ের দখলে রয়েছে। সংগঠনের স্বীকারোক্তি, চাঁইপাটে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে লড়াই করা হয়েছে। তাই টিএমসিপি সুবিধে করতে পারেনি। এসএফআইয়ের এক জেলা নেতার কথায়, “মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে রাতভর আটকে রাখা হয়েছিল চাঁইপাট কলেজের ছাত্র সংসদের সভাপতি, কলেজ ইউনিটের সম্পাদককে। বহু কর্মী আক্রান্ত হয়। তাও কর্মীরা পিছিয়ে আসেনি। প্রতিরোধ গড়ার ফলেই চাঁইপাটে সাফল্য মিলেছে।” জেলা সম্মেলনে এসে বিভিন্ন এলাকার কর্মীরা এই সাফল্যের কথা শুনেছেন।
মেদিনীপুরের লোধা স্মৃতি ভবনে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। জেলা সম্মেলনের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে এসএফআইয়ের স্বীকারোক্তি, ‘এই চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রায় সব জায়গায় প্রতিবাদ করতে ইচ্ছুক কিছু ছাত্রছাত্রী এগিয়ে আসছে। কিন্তু সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার অভাবে তাদের সংগঠনে আনা যাচ্ছে না। এই দুর্বলতা কাটাতে হবে।’ সিপিএমের ছাত্র সংগঠন মানছে, ‘মেসে- হস্টেলে যোগাযোগ, রাত্রিযাপন করার অভ্যাস অত্যন্ত কমে গিয়েছে। বলা ভাল প্রায় নেই। এখানে মনোনিবেশ করতে হবে। পরিস্থিতির বিভিন্ন ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে। একে কাজে লাগানোর জন্য চাই সংগঠিত উদ্যোগ। আজকের দিনে স্বতঃস্ফূর্ততার উপাদান নেই বললেই চলে। নেতৃত্বদের তরফ থেকেই রাজনৈতিক মতাদর্শগতচর্চার ঘাটতি প্রকট। যা কর্মী বাহিনীকে রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পরিস্থিতির সব উপাদানকে ব্যবহার করার ঘাটতি থেকেছে।’ এসএফআইয়ের মতে, গত দু’বছর দু’মাস নানা পরিস্থিতি, বাঁকমোড়, জটিলতার মধ্য দিয়ে সংগঠন পরিচালিত হয়েছে। সম্মেলনে ঘুরে দাঁড়ানোর দাওয়াই দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের পরামর্শ, ‘ধারাবাহিক কর্মসূচিতে আসছে এমন নতুন মুখদের চিহ্ণিত করে ধারাবাহিক যোগাযোগ করে রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও সংগঠন সচেতন করে তুলতে হবে। সভাগুলোতে রাজনৈতিক ও মতাদর্শগতচর্চার অভ্যাস বজায় রাখতে হবে। কর্মসূচিগুলোর রাজনৈতিক কারণ জানতে হবে এবং নিচুতলায় কর্মসূচির রাজনৈতিক ব্যাখ্যাও দিতে হবে।’