সংগ্রহশালা নেই, অবহেলায় মোগলমারি বৌদ্ধবিহার

২০০৩ সালে ঢিবি খনন করে বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অশোক দত্ত। তাঁর উদ্যোগে দফায়-দফায় চলেছিল খননকাজ। উদ্ধার হয়েছিল স্ট্যাকো মূর্তি।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৩
Share:

ভগ্নদশা: অবহেলায় পড়ে রয়েছে বৌদ্ধবিহার। নিজস্ব চিত্র

শুধু রাজ্য বা দেশ নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেও খ্যাতি ছড়িয়েছে মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের। মোগলমারি নিয়ে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্রও। চলছে মহাবিহার নিয়ে নানা গবেষণা। এই বৌদ্ধবিহার সংরক্ষণের পাশাপাশি সংগ্রহশালা তৈরির কথা বলেছিল রাজ্য সরকার। সেই কাজ অবশ্য এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।

Advertisement

২০০৩ সালে ঢিবি খনন করে বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অশোক দত্ত। তাঁর উদ্যোগে দফায়-দফায় চলেছিল খননকাজ। উদ্ধার হয়েছিল স্ট্যাকো মূর্তি। অশোকবাবু প্রয়াত হয়েছেন। পরবর্তীকালে এই কাজে আগ্রহ প্রকাশ করে এগিয়ে এসেছিল রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ। ২০১৩ সাল থেকে তিন দফায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ফের হয় খননকাজ। এমন একটি প্রাচীন নিদর্শনের সংরক্ষণের আশ্বাস দিয়েছিল রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ। বছর দেড়েক আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে খননকাজ। তারপর থেকেই অবহেলায় পড়ে বৌদ্ধবিহার। রোদে-জলে ক্ষতি হচ্ছে বৌদ্ধবিহারে খননকার্যে পাওয়া পুরাতাত্ত্বিক নানা নিদর্শনের। সংরক্ষণের অভাবে খসে পড়ছে স্ট্যাকো মূর্তিও।

অথচ এই বৌদ্ধবিহার নিয়ে আলোচনাসভার আয়োজন হচ্ছে ভিন্‌ রাজ্যেও। গত ২৩ থেকে ২৫ডিসেম্বর পর্যন্ত ছত্তীসগঢ়ের মহাসমুন্দ জেলার সিরপুরে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক উৎসবেও স্থান করে নিয়েছিল মোগলমারি। গত ২৩ ডিসেম্বর ওই সভায় যোগ দিয়ে মোগলমারি নিয়ে আলোচনা করেন মোগলমারি বৌদ্ধ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক অতনু প্রধান। এমনকী ওই অনুষ্ঠানেই অতনু প্রধান ও সন্তু জানার দু’টি ভাষায় লেখা বই প্রকাশ করেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ।

Advertisement

অতনুবাবু বলছেন, “আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের কী গুরুত্ব তা ছত্তীসগঢ়ের ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে বুঝতে পেরেছি। সিরপুরের বৌদ্ধবিহার রক্ষণাবেক্ষণে ছত্তীসগঢ় সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার কী কাজ করেছে তাও দেখলাম। অথচ সিরপুরের থেকেও প্রাচীন হওয়া সত্ত্বেও মোগলমারি বৌদ্ধবিহার রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেই। সমস্যা সমাধানে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।”

সমস্যা কোথায়? প্রশাসনিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মোগলমারি বৌদ্ধবিহার সংরক্ষণের পাশাপাশি সংগ্রহশালার তৈরির কথা বলেছিল রাজ্য সরকার। সেই মতো ২০১৫ সালে কাজও হয়। ২০১৬ সালে সংগ্রহশালার জমি পাঁচিল দিয়ে ঘেরার কাজ হয়। পরে কিছু সমস্যার দরুন পিছু হটে সরকার। বৌদ্ধবিহারের যে জমিতে সখীসেনা ঢিবিটি অবস্থিত, সেই জমির মালিকানা রয়েছে স্থানীয় তরুণ সেবা সঙ্ঘ নামে একটি ক্লাবের কাছে। খনন ও সংরক্ষণের কাজ শুরুর আগে সরকার চাইছে, ক্লাব কর্তৃপক্ষ ওই জমি রাজ্য সরকারকে দান করুন। তবে জমি দান করার জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষ নানা শর্ত আরোপ করেছন বলে অভিযোগ। আলোচনার মাধ্যমেও সমস্যার মীমাংসা না হওয়ায় শুরু হয়নি সংরক্ষণের কাজও।

দাঁতনের বিধায়ক বিক্রম প্রধান বলেন, “জমিটি যেহেতু তরুণ সেবা সঙ্ঘের তাই ওঁরা জমিটি সরকারকে দিতে চাইছে না। আমি বহু চেষ্টা করছি। সমস্যা সমাধানের জন্য বিধানসভাতেও এ বিষয়ে বলেছি। দেখা যাক কী হয়!” যদিও তরুণ সেবা সঙ্ঘের সম্পাদক তরুণ চন্দ বলছেন, “এতদিন ধরে আমরা মোগলমারিকে আগলে রেখেছি। আমরা কখনও জমি দান করব না বলিনি।’’ তাঁর দাবি, ক্লাবের ছেলেদের মোগলমারি বৌদ্ধবিহারে চাকরি ও নতুন ক্লাব ঘর গড়ে দেওয়ার মতো তাঁদের কিছু শর্ত রয়েছে। সেগুলি আলোচনা করে মীমাংসা করলেই হয়। কিন্তু সরকার আলোচনায় বসছে না।” এ বিষয়ে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদীপ সরকার বলেন, “আমার বিষয়টি জানা নেই। আমি খোঁজ নেব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement