এক প্রসূতি ও সদ্যোজাতের মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর বাড়ির লোকজন। ঘটনার খবর পেয়েই হাসপাতালে পৌঁছে যায় ঘাটাল থানার পুলিশও।
রোগীর বাড়ির লোকজনদের অভিযোগ, “কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সের গাফিলতির কারণের মৃত্যু হয়েছে মা ও সদ্যোজাতের। আমরা অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি চাই।” হাসপাতালের সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পাঁচজনের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। দু’দিনের মধ্যেই রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।” মৃতের বাড়ির লোকজন পুরো ঘটনাটি ঘাটালের মহকুমাশাসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও থানায় লিখিত ভাবে জানিয়েছে। এমনকী দেহ ঘাটালে ময়নাতদন্ত করাতেও আপত্তি জানায় মৃতার আত্মীয়েরা। বৃহস্পতিবার বিকালে দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতাল ও প্রসূতির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে দাসপুর থানার রাধাকান্তপুরের গ্রামের বাসিন্দা খুকুমনি মাইতি (২৬) ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে স্ত্রী ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ জোতির্ময় সামন্তের অধীনেই ভর্তি হন তিনি। প্রসূতির স্বামী প্রসেনজিৎ মাইতির অভিযোগ, ‘‘মঙ্গলবার ভর্তির পর থেকে আমার স্ত্রীর দিকে কেউ নজর দেয়নি। যন্ত্রণায় ছটপট করলেও কোনও চিকিৎসা হয়নি। তখন আমরা ডাক্তারবাবুকে সিজার করার জন্য আর্জি জানায়। কিন্তু ডাক্তারবাবু জানান সিজারের প্রয়োজন হবে না।” মৃতের এক আত্মীয়ের অভিযোগ, “বুধবার সকালে লেবার রুমের টেবিলে তুলে তিন জন নার্স মিলে পেটের উপর অত্যধিক চাপ দেয়। তার জেরেই শিশুটির মৃত্যু হয়। চিকিৎসক যদি ঠিকঠাক কর্তব্য পালন করতেন, তাহলে এমনটা ঘটত না।”
হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার দুপুরের পর থেকেই খুকুমনি অসুস্থ হয়ে পড়ে। উন্নত চিকিৎসার জন্য একসময় এইচডিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়। রাতে পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়। বৃহস্পতিবার সাতসকালেই ঘোষণা করা হয় মা ও সদ্যোজাত দু’জনই মারা গিয়েছে। এরপরই এ দিন সকালে হাসপাতালে ঢুকে বিক্ষোভ দেখায় রোগীর পরিজনেরা। খবর পেয়ে দাসপুরের গ্রাম থেকে হাসপাতালে ভিড় জমান পড়শিরাও। চিকিৎসক ও তিন জন নার্সকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব হন আত্মীয়েরা।পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর আত্মীয়দের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে বিভাগীয় তদন্ত ও গাফিলতির প্রমাণ হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ।