Belpahari

নেই প্রশিক্ষণ, হোম স্টের পরিষেবায় প্রশ্ন

বেলপাহাড়ি ব্লকে এখন হোম স্টের ছড়াছড়ি। ঝাড়গ্রাম জেলার ১০২ টি হোম স্টের মধ্যে ৬৯টিই রয়েছে বেলপাহাড়ির বিভিন্ন এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫০
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

গত নভেম্বরে কলকাতা থেকে বেলপাহাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন এক প্রবীণ পর্যটক। সঙ্গে ছিলেন ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রী। ঘুরতে এসে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আশা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেসব মেলেনি। পাহাড়ি এলাকায় এসে দিশি ডিমের ডালনা খেতে চেয়েছিলেন। পেয়েছিলেন বটে তবে ডিম ছিল পচা। বেলপাহাড়ির ওই হোম স্টের বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে সরব হন প্রবীণ পর্যটক। তিনি জানিয়েছিলেন, পচা ডিমের কথা বলার পরে হোম স্টের সার্ভিস বয় ভাবলেশহীন মুখে জবাব দিয়েছিলেন, ‘হতে পারে।’ তাঁর অভিযোগ ছিল, 'যাঁরা রান্না করেন তারা কেউই রাঁধুনি নন। যাঁরা সার্ভিস দেন, তাঁদের বিন্দুমাত্র হোটেল-সার্ভিস নিয়ে কোনও জ্ঞানগম্যি নেই।' এই জন্য হোম স্টের মালিকপক্ষকে দুষে ওই পর্যটকের মন্তব্য, ‘সস্তায় বাজিমাত করার জন্য এ এক মালিকি চক্কর। দোষটা সম্পূর্ণ মালিকের। ওই সরলমনা, নিপাট মানুষগুলো, যারা সার্ভিস দিচ্ছিলেন, দোষটা তাঁদের কখনওই নয়।’

Advertisement

ঘটনা হল, বেলপাহাড়ি ব্লকে এখন হোম স্টের ছড়াছড়ি। ঝাড়গ্রাম জেলার ১০২ টি হোম স্টের মধ্যে ৬৯টিই রয়েছে বেলপাহাড়ির বিভিন্ন এলাকায়। কলকাতা ও বাইরের ব্যবসায়ীরাও মুনাফার আশায় পাহাড়ি এলাকায় হোম স্টে খুলেছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিষেবা মিলছে না বলেই অভিযোগ। কলকাতার ওই প্রবীণ পর্যটকের মতো অভিজ্ঞতা হয়েছে আরও অনেকের। তাঁরাও বলছেন, বেশিরভাগ হোম স্টের কর্মীরা প্রশিক্ষিত নন। অত্যন্ত দায়সারা ভাবে পর্যটকদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। নিয়মিত ঘর ও চত্বর সাফ করা হচ্ছে না। পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে হোম স্টেগুলিতে নজরদারি হওয়া প্রয়োজন বলেই মনে করছেন পর্যটকদের একাংশ। বেলপাহাড়ির পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠনও চাইছে সরকারি উদ্যোগে হোম স্টের কর্মীদের সহবত শেখানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক।

কলকাতার বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষিকা মল্লিকা মণ্ডল বেলপাহাড়ির একটি পাহাড়ি এলাকার হোম স্টেতে ছিলেন। তাঁর মতে, ‘‘উত্তরবঙ্গ কিংবা সিকিমের হোম স্টেতে যে ধরনের ঊষ্ণ অভ্যর্থনা ও ভাল পরিষেবা মেলে, বেলপাহাড়ির ক্ষেত্রে তেমনটি মেলে না। এখানে হোম স্টের কর্মীরা প্রশিক্ষিত নন। তাই এমন সমস্যা।’’ কলকাতার আরেক পর্যটক পঙ্কজ গোস্বামীর কথায়, ‘‘সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে হোম স্টেগুলি তৈরি হয়েছে। দু’বার গিয়েছি। প্রথমবার যে হোম স্টেতে ছিলাম, সেটির পরিষেবা যথেষ্ট ভাল ছিল। তবে দ্বিতীয়বার যেটিতে ছিলাম সেটির সার্ভিস খুবই খারাপ। কর্মীরাও কেউই পর্যটন পরিষেবা দেওয়ার আদব-কায়দার সঙ্গে পরিচিত নন বলেই মনে হল।’’

Advertisement

ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের নকাট গ্রামের একটি ইকো ভিলেজের মালিক শুভাশিস দেবসিংহ বলছেন, ‘‘কয়েক ঘণ্টার কর্মশালা এসব শেখানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। সরকারি উদ্যোগে অতিথিদের পরিষেবা দেওয়ার আদব কায়দা শেখানোর জন্য কমপক্ষে দশ-কুড়ি দিনের কর্মশালার ব্যবস্থা করা দরকার।’’
বেলপাহাড়ি টুরিজ়ম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র বিধান দেবনাথও বলছেন, ‘‘সংগঠনভুক্ত হোম স্টেগুলিতে ভাল পরিষেবা দেওয়ার জন্য আলোচনা চলছে। হোম স্টের পাচক ও কর্মীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে সরকারি ভাবে সমস্ত হোম স্টের কর্মীদের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হলে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে।’’

ঝাড়গ্রাম জেলার পর্যটনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মহম্মদ আলিম আনসারি বলছেন, ‘‘এ ব্যাপারে আবেদন এলে খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’ তবে তিনি জানান, সরকারি উদ্যোগে গাইডের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গত অর্থবর্ষে ৯০ জনকে গাইডের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement