Repair

Tamluk Royal palace : রাজার বাড়ি মেরামতে নবাবের জেলার কারিগর

কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পর এবার রাজবাড়ির মূল অংশের সংরক্ষণের কাজ শুরু করল পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২ ০৮:৩৮
Share:

সংরক্ষণের কাজ চলছে রাজবাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

ঐতিহ্যবাহী তমলুক রাজবাড়িকে ‘জাতীয় সৌধ’ ঘোষণা করেছিল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই)। প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে ভগ্নপ্রায় ওই রাজবাড়ি সংরক্ষণের জন্য পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তরফে উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছিল। সংরক্ষণের প্রথম ধাপ হিসেবে গত বছর জানুয়ারি মাসে রাজবাড়ি-সহ সংলগ্ন চত্বরে থাকা আগাছা পরিষ্কার করে রাজবাড়ির সামনে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তরফে রাজবাড়ির স্থাপনকাল ও তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ওই রাজবাড়ির চত্বরে সীমানা প্রাচীর দেওয়া শুরু হয়েছিল। সেই কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পর এবার রাজবাড়ির মূল অংশের সংরক্ষণের কাজ শুরু করল পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। কয়েকশো বছরের প্রাচীন ওই রাজবাড়ি সংরক্ষণের জন্য মুর্শিদাবাদ থেকে কারিগর নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও রাজবাড়ির ভবন সংরক্ষণের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত ইটও আনা হয়েছে মুর্শিদাবাদ থেকে। শুক্রবার রাজবাড়ি চত্বরে গিয়ে দেখা গেল রাজবাড়ির সামনে লোহার রেলিং-সহ সীমানা প্রাচীর দেওয়ার কাজ প্রায় শেষ। সীমানা প্রাচীরের প্রবেশপথে লোহার গেট তৈরির কাজ চলছে। ওই প্রবেশপথ থেকে প্রায় একশো মিটার দূরে মূল রাজবাড়ির ভবন পর্যন্ত সীমানা প্রাচীরের ভিতরের গা ঘেঁষে দু’দিকেই বিশেষ পদ্ধতিতে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। মূল রাজবাড়ির খিলানের সংস্কার চলছে জোর কদমে।

কী ভাবে হচ্ছে রাজবাড়ি সংরক্ষণের কাজ? পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মধ্যোত্তর যুগের অপূর্ব স্থাপত্যকলার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তমলুক রাজবাড়ি। রাজবাটির ভবনটি একটি চতুষ্কোণ চত্বরকে ঘিরে আছে। ব্যারাকের স্থাপত্য বিশিষ্ট দোতলার কাঠামোর দুই দিকের অধিকাংশ অংশ বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত। রাজবাড়ির বিশাল স্থাপত্যের সামনের অংশে রয়েছে চওড়া স্তম্ভের সমন্বয়ে কিছু খিলান যুক্ত স্থাপত্য যা বাংলায় ইন্দো-ইসলামীয় স্থাপত্যকলার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ইট দ্বারা নির্মিত এই ভবনের কিছু স্তম্ভের উপরিভাগ নির্মাণে লাল বেলে পাথর ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। সার্বিকভাবে সমগ্র রাজবাড়ি ইন্দো-ইসলামীয় ও নব্য-ধ্রপদী স্থাপত্যশিল্পের এক অপূর্ব মিশ্রণ বলা যেতে পারে।

Advertisement

পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ সূত্রে খবর, রাজবাড়ির স্থাপত্যশৈলী অক্ষুণ্ণ রেখে সংরক্ষণের কাজ করা হচ্ছে।এর জন্য রাজবাড়ির মূল অংশ নির্মাণে যে ধরনের ইট এবং গাঁথনির জন্য চুন-সুরকি ব্যবহার করা হয়েছিল সেইসব সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে রাজবাড়ির খিলান সংস্কারের কাজ চলছে। রাজবাড়ি সংরক্ষণের কাজে ব্যবহারের জন্য পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তত্ত্বাবধানে তৈরি বিশেষ ধরনের ইট মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে আনা হয়েছে। সেখান থেকে কয়েকজন কারিগরও আনা হয়েছে। মুর্শিদাবাদের ‘হাজারদুয়ারি’ প্রাসাদ তাঁদের তত্তাবধানে রয়েছে। তাই এই ধরনের প্রাচীন ‘স্থাপত্য’ সংরক্ষণের কাজে যুক্ত অভিজ্ঞ কারিগরদের তমলুক রাজবাড়ি সংরক্ষণের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে।

রাজবাড়ির সংরক্ষণ ছাড়াও তমলুকের নিমতৌড়িতে ‘তাম্রলিপ্ত আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম’-এর নিজস্ব ভবন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। বর্তমানে পুরসভার অফিসের কাছে একটি ভাড়া বাড়িতে মিউজিয়াম চালানো হচ্ছে। নিমতৌড়িতে জেলাপ্রশাসনিক অফিসের কাছে জমিতে ভবন গড়ে ‘তাম্রলিপ্ত আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম’ হবে। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রাজবাড়ি সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। নিমতৌড়িতে নিজস্ব মিউজিয়াম ভবন গড়ার জন্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া চলছে।’’

তমলুকের অন্যতম দর্শনীয় স্থান তমলুক রাজবাড়ি সংরক্ষণের কাজ শুরু হওয়ায় খুশি রাজপরিবারের সদস্য তথা তমলুক পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর প্রাক্তন মুখ্য প্রশাসক দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়। তিনি বলেন, ‘‘এএসআই রাজবাড়িকে ‘জাতীয় সৌধ’ হিসেবে ঘোষণার পর কিছুটা দেরিতে হলেও সংরক্ষণের কাজ শুরু করায় আমরা কৃতজ্ঞ। সংরক্ষণের কাজ ভালভাবেই চলছে। তমলুক শহরে আসা পর্যটক, শিক্ষামূলক ভ্রমণে আসা পড়ুয়া ও গবেষকদের কাছেও রাজবাড়ির আকর্ষণ আগের চেয়ে বাড়বে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement