—প্রতীকী চিত্র।
নিয়ম না মানলে নার্সিংহোমের লাইসেন্স বাতিল করার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। তাতেও অবশ্য নার্সিংহোম নিয়ে অভিযোগে দাঁড়ি পড়েনি বলে অভিযোগ। পরিদর্শনে কোনও ত্রুটি ধরা পড়লে এ বার সরাসরি নার্সিংহোমের ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। শনিবার ঘাটালে নার্সিংহোম মালিকদের নিয়ে এক বৈঠকে গিরীশচন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘নিয়ম না মানলে নার্সিংহোম বন্ধ করে দিন। আর সতর্ক করা হবে না। এ বার পরিদর্শনের সময় ত্রুটি ধরা পড়লেই ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে নার্সিংহোমগুলিতে রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও), পাঁচটি শয্যা পিছু একজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স থাকতেই হবে। এ ছাড়াও অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস থাকা জরুরি। ওটিতে পর্যাপ্ত জায়গাও থাকতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি নার্সিংহোমে ‘স্টেরিলাইজ রুম’ থাকা প্রয়োজন। থাকতে হবে পরিবেশ, দমকল ও পুরসভা বা পঞ্চায়েতের ছাড়পত্রও। অভিযোগ, অধিকাংশ নার্সিংহোমই এই নিয়মের অধিকাংশই মানে না।
নিয়ম অনুযায়ী, লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই নার্সিংহোমের সব তথ্য-সহ অনলাইনে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের আবেদন করতে হয়। ঘাটাল মহকুমায় ৪২টি নার্সিংহোম রয়েছে। অধিকাংশ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষই এই নিয়মের তোয়াক্কা করেন না বলে অভিযোগ।
মাসখানেক আগেই নার্সিংহোমগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট’-এ বেশ কিছু বদল করেছে রাজ্য সরকার। নার্সিংহোমগুলিকে নিয়ম মেনে চলার কথাও বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর। আচমকা পরিদর্শন হয় জেলার নার্সিংহোমগুলিতেও। নার্সিংহোম মালিকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে সতর্কও করেন জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা। দিন কয়েক যেতেই পরিস্থিতি আবার যে কে সেই বলে অভিযোগ।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ঘাটালের অধিকাংশ নার্সিংহোমেই ১০-১৫টি করে শয্যা রয়েছে। আরএমও দূর অস্ত, অনেক নার্সিংহোমেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সও নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাটালের এক নার্সিংহোম মালিক তো বলেই ফেললেন, “সব সময়ের জন্য আরএমও ও নার্স রাখার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনা। দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেতন দিয়েই লোক পেয়ে যাচ্ছি। দিব্যি ব্যবসাও চলছে। আবার লাইসেন্সও মিলে যাচ্ছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাটালের এক বাসিন্দাও অভিযোগ করছেন, বৈঠক, পরিদর্শন এ সব প্রায়ই হয়। নার্সিংহোম মালিকদের সতর্কও করা হয়। তারপরেও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই নার্সিংহোমগুলি দিব্যি চলে। ডাক্তার-নার্স না থাকা সত্ত্বেও ঘুরপথেই নার্সিংহোমের লাইসেন্স মিলে যাচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকও বলছেন, “ঠিকঠাক কাগজ দেখা হলে সিংহভাগ নার্সিংহোমই চলার কথা নয়।”
যদিও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবুর দাবি, খাতায়-কলমে সবকিছু ঠিক থাকলে তবেই অনুমতি দেওয়া হয়। এ দিনের বৈঠক শেষেও তিনি বলেন, ‘‘দ্রুত নার্সিংহোমগুলিতে পরিদর্শন শুরু হবে। কড়া ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”