Adenovirus

৩০ হাজার অপুষ্ট শিশুকে নিয়ে অ্যাডিনোয় চিন্তা

অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এক বিধি প্রকাশ করা হয়েছে।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৩ ০৭:৩৯
Share:

ঘাটাল সুপার স্পেশালিটিতে। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

অ্যাডিনোভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে আসা শিশু ভর্তি বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের হাসপাতালগুলিতে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে জেলার অপুষ্ট শিশুদের নিয়েও।

Advertisement

প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, জেলায় পাঁচ বছর কিংবা তার কমবয়সি অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এক বিধি প্রকাশ করা হয়েছে। ওই বিধিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, অপুষ্টির সমস্যা থাকা শিশুদের বিশেষভাবে সাবধানে রাখতে হবে। সেই বিধি-নির্দেশিকা জেলাতেও এসেছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অবশ্য দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুরে এখনও পর্যন্ত কোনও শিশু অ্যাডিনোভাইরাসে সংক্রমিত হয়নি। ফলে, উদ্বেগের কিছু নেই। অপুষ্ট শিশুদের দিকেও বিশেষভাবে নজর রাখার কথা ব্লকগুলিকে জানানো হয়েছে।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘জেলায় অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ নেই। কিছু শিশুর ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। জ্বরের পাশাপাশি সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে কেউ কেউ। তাদের চিকিৎসা চলছে।’’ মেদিনীপুর মেডিক্যালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তারাপদ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কিছু শিশু ভর্তি হচ্ছে। তাদের কয়েকজনের শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। অযথা উদ্বেগের কিছু নেই।’’

Advertisement

অপুষ্টির সমস্যা থাকা শিশুদের এই সময়ে বিশেষভাবে সাবধানে রাখা প্রয়োজন, জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। মেদিনীপুরের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘দেখছি অল্পেতেই কাবু হচ্ছে কিছু শিশু। আবহাওয়ার পরিবর্তন এর একটা কারণ। আর এর পিছনে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতিও।’’ তাঁর অনুমান, করোনার কারণে দীর্ঘ সময়ে ঘরবন্দি থেকেছে শিশুরা। খেলাধুলো, মেলামেশা থেকে অনেকটা দূরে থেকেছে তারা। ফলে, অনেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমেছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা কমাতে একদিকে যেমন আরও পদক্ষেপ-পরিকল্পনা করা হচ্ছে, অন্য দিকে তেমনই ওই শিশুদের উপরে আলাদাভাবে নজরও রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে এই সময়ে।’’

প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে প্রায় ৬,৬০০টি। ‘স্‌প্লিমেন্টারি নিউট্রিশন’ কর্মসূচির আওতায় রয়েছে প্রায় ৪,৬৪,৪০০ জন। এর মধ্যে ৩ বছর পর্যন্ত শিশু রয়েছে প্রায় ১,৯১,২০০ জন। ৩ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত শিশু প্রায় ১,৯১,০০০ জন। পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছরের কমবয়সি প্রায় ৮.৫ শতাংশের বেশি শিশু অপুষ্টির শিকার। কোন এলাকায় কত অপুষ্ট শিশু রয়েছে, সে সব জানে ব্লক প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতরও। দফতর সূত্র মনে করাচ্ছে, অপুষ্ট শিশুদের জন্য পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার পরেও তাদের কারও কারও মধ্যে অপুষ্টিজনিত রোগ দেখা দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তাদের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। তাদের পুষ্টির জন্য পুনর্বাসনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘অন্য জেলার চেয়ে আমাদের জেলায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশু তুলনায় কম।’’

তবে এই অপুষ্ট শিশুদের নিয়ে রয়েছে উদ্বেগ। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা রয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত শিশুকে পর্যবেক্ষণের পদ্ধতি, তার ঘরোয়া চিকিৎসা এবং কী ভাবে বিপদের পূর্বাভাস বুঝে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে, তা জানানো রয়েছে ওই নির্দেশিকায়। ফলে, চিন্তার কিছু নেই।’’

কোনও বিপদ-লক্ষণ থাকলে অবিলম্বে শিশুকে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত, সে শিশু পুষ্ট হোক কিংবা অপুষ্ট, মনে করাচ্ছেন জেলার ওই স্বাস্থ্যকর্তা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement