school

সরকার পোষিত স্কুলে অতিরিক্ত ভর্তি ফি, নালিশ

শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর বিনা ব্যয়ে বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা আছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:০৪
Share:

ফাইল চিত্র।

রাজ্যের সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সব স্কুলে নতুন ক্লাসে ভর্তির পর পঠন-পাঠন শুরু হয়েছে। অভিযোগ, সরকারি ভাবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র ভর্তিতে স্কুলের উন্নতি বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নেওয়ার কথা বলা হলেও কাঁথি ও সংলগ্ন এলাকার কিছু স্কুলে তার চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। কোথাও স্কুলের বর্ষপূর্তি, কোথাও স্কুলের উন্নয়নের নাম করে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অভিভাবকেরা। ওই সব স্কুল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, সরকার পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিকে আনুষঙ্গিক বেশ কিছু খরচ চালাতে হয় ফি-এর টাকায়। স্কুলে শিক্ষার মান ঠিক রাখতে তাই তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন অতিরিক্ত ফি নিতে।

Advertisement

শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর বিনা ব্যয়ে বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। ২০১১ সালে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, স্কুলগুলি ডেভেলপমেন্ট ফি বাবদ সর্বাধিক ২৪০ টাকা নিতে পারবে। কেউ যদি সেই টাকাও দিতে অক্ষম হন, তা হলে আবেদনের পরে পুরো ফি মকুব করা হবে। এই নিয়ম বলবৎ থাকলেও বেশ কিছু সরকারি পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে বেশি ফি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

কাঁথি শহরের ধর্মদাস বাড় এবং জালাল খান বাড় এলাকার কয়েক জন অভিভাবক জানান, তাঁদের এলাকার কিশোর নগর শচীন্দ্র শিক্ষাসদন স্কুলে ভর্তি বাবদ ৭০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমি জোগাড়ের কাজ করি। ৭০০ টাকা দিয়ে মেয়েকে খুব কষ্ট করে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছি। এমনিতেই এই সময়ে কাজকর্ম কমে গিয়েছে। স্কুলকে অনুরোধ করেও লাভ হয়নি।’’ কাঁথি শহর সংলগ্ন বহিত্রকুন্ডা এলাকার এক অভিভাবক জানান, তাঁর ছেলেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করাতে ৭০০ টাকা দিতে হবে। তিনি ওই টাকা দিতে অক্ষম। যদিও এই সব স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ছাত্রপিছু বছরে মাত্র ২৪০ টাকা দিয়ে সারা বছর স্কুল চালানো কষ্টকর। কাঁথি হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছন্দা শাসমল বলেন, “ভর্তির সময় হয়তো সরস্বতী পুজো বাবদ খরচের টাকা একসঙ্গে কেউ কেউ দিয়েছে।”

Advertisement

কিশোর নগর শচীন্দ্র শিক্ষা সদনের প্রধান শিক্ষক রাধা মাধব দাস গোটা বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যান। কাঁথির একটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের এক শিক্ষকের মতে, পড়ুয়ারা মিড-ডে মিল, স্কুলের পোশাক-জুতো, ছাত্রীরা সাইকেল পায় বিনামূল্যে। তাই সুষ্ঠু পঠনপাঠনের জন্য স্কুলের পাশে দাঁড়াতে অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসা দরকার।

অতিরিক্ত ফি নেওয়া নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শাখার সম্পাদক বিধানচন্দ্র সামন্ত বলেন, “এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে প্রচ্ছন্নভাবে বেসরকারিকরণ করার চেষ্টা চলছে।’’ প্রধান শিক্ষক সমিতির রাজ্য কমিটির নেতা প্রীতি রঞ্জন মাইতি বলেন, ‘‘জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যা কিছু অব্যবস্থা রয়েছে সে বিষয়ে আমরা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি।’’

গত বছর সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের কাছে অতিরিক্ত ভর্তি ফি নেওয়ার প্রতিবাদে জেলা জুড়ে আন্দোলন শুরু করেছিল এসইউসির ছাত্র সংগঠন ডিএসও। সংগঠনের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘‘গত বছর জেলা শিক্ষা দফতর থেকে প্রতিটি স্কুলকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে ২৪০ টাকার বেশি ভর্তি ফি নেওয়া যাবে না বলে বাধ্য করা হয়েছিল। কিন্তু এবার অধিকাংশ স্কুলে বিনা রসিদে খুশিমত টাকা নেওয়া হচ্ছে। দুঃস্থ অভিভাবকেরা এতে সমস্যায় পড়ছেন।’’

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভাশিস মৈত্র বলেন, ‘‘শিক্ষার অধিকার আইন মেনে সব স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র ভর্তি নেওয়ার নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও যদি কোনও স্কুল অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে এমন নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ করা করব।’’

প্রশ্ন উঠেছে ওই সব সরকার পোষিত স্কুলের পরিচালন কমিটির কর্তৃত্ব নিয়ে। সম্প্রতি জেলার প্রায় সমস্ত স্কুলেই পরিচালন কমিটি তৈরি হয়েছে। মূলত স্থানীয় এলাকার বাসিন্দাদের পরিচালন কমিটির সভাপতি এবং শিক্ষানুরাগী প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তারা ও এক্ষেত্রে কেন নীরব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement