সাজা ঘোষণার পর। ঘাটাল আদালতে চত্বরে এক অভিযুক্ত। — কৌশিক সাঁতরা
তাঁকে বেধড়ক মেরে হাত ভেঙে দিয়েও রেহাই দেয়নি ওরা। দু’চোখে ঢেলে দিয়েছিল অ্যাসিড-ও। বছর তেরো আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর-১ ব্লকের নন্দনপুর পঞ্চায়েত এলাকায় সৈয়দ আলি হোসেনকে খুনের চেষ্টা ও অ্যাসিড হামলার ঘটনায় সাত জনকে বৃহস্পতিবার দোষী সাব্যস্ত করে ঘাটাল আদালত। শুক্রবার তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক।
অ্যাসিড আক্রান্ত সৈয়দ আলি হোসেন অবশ্য ন্যায়বিচারের এই রায় শুনে যেতে পারেননি। কয়েক মাস আগেই বছর বাহান্নর আলি হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। তবে রায় শুনে খুশি আলি হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন। ঘটনার সময়ে নাবালক ছিলেন সাদ্দাম। এ দিন আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ বার বাবার আত্মা শান্তি পাবে। ঘটনার পর আমাদের উপর অনেক অত্যচার হয়েছে। তারপরেও আমরা লড়েছি।” স্ত্রী বছর পঞ্চাশের আজমিরা বিবিও বলছেন, “বিচারকের রায়ে আমি খুশি। তবে স্বামী বেঁচে থাকলে আরও খুশি হতাম।”
মামলার সরকারি আইনজীবী চিত্তরঞ্জন কর্মকার জানান, ২০০৪ সালে সৈয়দ হোসেন আলির উপর হামলার ঘটনায় ১২ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন অভিযুক্তদের একজন মারা যায়। চারজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। বাকিদের মধ্যে শেখ আলাউদ্দিন, শেখ কুদরত আলি, শেখ লুৎফর রহমান, শেখ মোবারক আলি, শেখ ফকির মহম্মদ, ইয়াকুব আলি ও কামরুল আলমকে বৃহস্পতিবার দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। শুক্রবার তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: দিনেদুপুরে বাড়ি ঢুকে বৃদ্ধাকে মারধর করে লুঠ
শুক্রবার বিকেল ৩টে নাগাদ অভিযুক্তদের আদালতে আনা হয়। প্রথমেই অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেন বিচারক। এজলাসে দাঁড়িয়ে তাঁরা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন। এর মিনিট পঁচিশেক পরেই বিচারক অভিযুক্তদের সাজার আদেশ দেন। রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে অভিযুক্তদের কয়েকজন।
ঘটনাটি ২০০৪ সালের ২০ মার্চের। নন্দনপুর পঞ্চায়েতের পাইকান লক্ষ্মী গ্রামের মোড়ল ছিলেন সৈয়দ আলি হোসেন। গ্রামে কোনও গোলমাল হলে সালিশি সভা বসিয়ে বিচার করতেন তিনি। তা নিয়ে শেখ আলাউদ্দিন ও তার দলের লোকেদের সঙ্গে হোসেন আলির গোলমাল চলছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় বাসিন্দা শেখ নুরবক্সের জমিতে সেচ দিয়ে হোসেন আলি বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির অদূরে একটি মাঠে শেখ আলাউদ্দিন-সহ জনা ১২ লোক চড়াও হয়ে প্রথমে তাঁর মুখে গামছা গুঁজে দেয়। তারপর লোহার রড, শাবল দিয়ে চলে বেধড়ক মারধর। মারের চোটে তাঁর একটি হাত ভেঙে যায়। এরপরেও রেহাই না দিয়ে হামলাকারীরা আলি হোসেনের দু’চোখে অ্যাসিড ঢেলে দেয়। অ্যাসিড দেওয়ার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল সিরিঞ্জও। ঘটনার পরই তাঁকে ফেলে রেখে চম্পট দেয় অভিযুক্তরা।
ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর স্থানীয় বাসিন্দারা আলি হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তাঁর দু’টি চোখই নষ্ট হয়ে যায়। কলকাতায় চিকিৎসার পর বাড়িতে ফিরে এলেও আর পুরোপুরি সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেননি তিনি। মাসখানেক আগে তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার পরই আলি হোসেনের ভাগ্নে মির্জা হান্নান আলি দাসপুর থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে দাসপুর থানার পুলিশ দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। পরে বাকি অভিযুক্তরাও আদালতে আত্মসমপর্ণ করে।