দখল: রাস্তার অর্ধেকটাই বালি। ঝাপেটাপুর মোড়ের কাছে। নিজস্ব চিত্র
রাস্তার বাঁ-দিক ঘেঁষে বাবার সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল বছর দশেকের সঞ্জয় কুমার। উল্টো দিক থেকে ট্রাক আসছে দেখে আরও বাঁ-দিকে সরে গেল ওই বালক। তার পরেই বিপত্তি। রাস্তার বাঁ-দিকে থাকা বালির স্তূপে সাইকেলের চাকা আটকে পড়ে গেল সঞ্জয়। হাত-পা কেটে রক্তারক্তি কাণ্ড।
খড়্গপুর শহরে এমন ছবি এখন হামেশাই চোখে পড়ছে। পুর-এলাকায় প্রায় প্রতিটি রাস্তার ধারে ইট-বালি-সিমেন্ট-স্টোনচিপস ইত্যাদি নানা ইমারতি সামগ্রী পড়ে থাকছে। বাদ নেই কাঠকয়লার গুঁড়োও। কোথাও বাড়ি তৈরির জন্য, কোথাও বা ফ্ল্যাট তৈরির জন্য আনা হয়েছে ওই সরঞ্জাম। কোথাও আবার ব্যবসার জন্য পড়ে থাকছে ইমারতি সামগ্রী। স্থানীয় বাসিন্দারা বারবার আপত্তি জানালেও সুরাহা হচ্ছে না। উল্টে প্রভাবশালী স্থানীয় ইমারতি সরঞ্জাম ব্যবসায়ীর রক্তচক্ষুর মুখে পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। পরিণাম, ইমারতি সামগ্রী দখল করছে রাস্তা। আর মোটরসাইকেল, সাইকেলের চাকা আটকে দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হচ্ছে পথচলতি মানুষকে।
শুধু বড় রাস্তা নয়, এই সমস্যা গলিপথেও রয়েছে। তবে বড় সড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকায় সেখানে বাসিন্দাদের ক্ষোভ বেশি। বিশেষ করে ঝাপেটাপুর ও মালঞ্চ সড়কে ইমারতি সামগ্রী রেখে ব্যবসা চলছে বহু দিন ধরে। যেমন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ঝাপেটাপুরের মূল সড়কের ধারে গীতা সাঁতরার বাড়ির সামনে দীর্ঘদিন ধরে বালি রেখে ব্যবসা চলছে। গীতাদেবী বলেন, “কিছু বলতে গেলে অসম্মানিত হতে হয়। তাই এখন চুপ থাকি।”
কে যাদব নামে স্থানীয় ওই ব্যবসায়ীর আবার যুক্তি, “গলির ভিতরে বাড়ি উঠছে। মানুষকে পরিষেবা দিতে গেলে রাস্তা ছাড়া কোথায় এই বালি রাখব। তা ছাড়া, রোজ তো বালি পড়ছে আবার উঠে যাচ্ছে। কেউ কিছু বলে না।”
তলঝুলি, ভবানীপুর মাঠপাড়া, সুভাষপল্লি, চণ্ডীপুর, কুমোরপাড়া, বালাজি মন্দিরপল্লি, প্রিয়নাথ স্কুল রোড, ডিভিসি এলাকার গলিপথে রাখা হচ্ছে বালি-সহ ইমারতি দ্রব্য। মালঞ্চ রোডেও এক ছবি। মালঞ্চর বাসিন্দা শুভ চক্রবর্তী বলেন, “প্রতিদিন মোটর সাইকেলে যেতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি। রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনা”
পুরসভা সব জেনেও উদাসীন বলে অভিযোগ শহরবাসীর। তবে সমস্যা মানছেন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। তিনি বলেন, “আমি মানছি এটা একটা বড় সমস্যা। রাস্তায় এ ভাবে ইমারতি সামগ্রী রাখা ঠিক নয়। কিন্তু আমাদের লোকবল কম। তাই নজরদারি চালানো সম্ভব হচ্ছে না।”