লেগেই রয়েছে দুর্ঘটনা, অভিযোগ ঘাটালবাসীর

বিকিকিনি রাস্তাতেই

গেল গেল গেল রে...একেবারে পিষে গেল— একটা টম্যাটো। সাইকেলের চাকায় লেগে রাস্তার সঙ্গে একেবারে পিষে গেল।সকাল ৭টা থেকে এমন ঘটনা জলসরা বাজারে প্রায় প্রতিদিনই ঘটে। তবে শুধু বেচারা টম্যাটো নয়। অনেক সময় ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে যায় মানুষেরও।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৮
Share:

নিয়ম-ভেঙে: এ ভাবেই রাস্তার উপর বসে বাজার। নিজস্ব চিত্র

গেল গেল গেল রে...একেবারে পিষে গেল— একটা টম্যাটো। সাইকেলের চাকায় লেগে রাস্তার সঙ্গে একেবারে পিষে গেল।

Advertisement

সকাল ৭টা থেকে এমন ঘটনা জলসরা বাজারে প্রায় প্রতিদিনই ঘটে। তবে শুধু বেচারা টম্যাটো নয়। অনেক সময় ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে যায় মানুষেরও। সাইকেল, রিকশা, ভ্যান, অটোর ধাক্কায় হাত কেটে, পা ছড়ে যায়। আবার ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কের বাজারগুলিতে থাকে প্রাণের ভয়ও। কারণ, ওই রাস্তায় সকাল থেকেই চলে ভারী পণ্যবাহী ট্রাক। তবে মানুষের ভিড়ে তারাও তেমন গতিতে বাড়াতে পারে না। ফলে যানজট নিত্যসঙ্গী।

অসুবিধা হচ্ছে, তবু সে দিকে হুঁশ নেই কারও। ফল্টে প্রতিদিন বে়ড়ে চলেছে আলু, পটল, মুলো, শাক-আনাজের বহর। বাসযাত্রী থেকে পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, তারা বার বার প্রশাসন, এলাকার বিধায়ক এবং মহকুমাশাসকের কাছে বারবার আবেদন করেছেন। রাস্তার উপর থেকে বাজার সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনও হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এ জন্য দায়ী প্রশাসনের উদাসীনতা।

Advertisement

ঘাটালে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। যাতায়াতের একমাত্র ভরসা সড়কপথ। পুলিশ, প্রশাসন সূত্রেই জানানো হচ্ছে, রাস্তা দখল করে বাজার বসছে বলেই ছোটখাট দুঘর্টনা রোজই ঘটছে। গত এক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দাসপুর থানা এলাকায় ১৫-২০টি দুঘর্টনা ঘটেছে রাস্তার উপরে বাজারকে কেন্দ্র করে।

সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন দাসপুরের বিধায়ক মমতা ভুঁইয়া এবং ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই। শঙ্করবাবুর আশ্বাস, “দ্রুত বাজারগুলি সরানোর বিষয়ে উদ্যোগী হব।” ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, “সুষ্ঠ ভাবে যাতে বাজারগুলি বসে সে বিষয়ে নির্দেশ দিতে হবে। এ জন্য জন প্রতিনিধি এবং পুলিশকে নিয়ে দ্রুত বৈঠক করা হবে।’’

কিন্তু এত দিনেও কেন সে সব করা গেল না?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাসকদলের এক নেতার বক্তব্য, “তিন দশক ধরে রাস্তার উপর বাজার বসছে। বেড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধবে কে? ভোট বড় বালাই।’’ পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার দেবব্রত সাহারও অসহায় গলা, “আমরা বহু বার ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়ে রাস্তা দখল করে ব্যবসা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘাটাল-পাঁশকুড়া, ঘাটাল-মেদিনীপুর (ভায়া নাড়াজোল), ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রোডের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার দু’পাশে বাজার বসে রোজ সকালে। গোটা মহকুমায় এমন বাজারের সংখ্যা ১২টি বাজার বসে। বেশিরভাগটাই দাসপুর, গৌরা, সোনামুই, বেলতলা, টালিভাটা, রাজনগর, হরিরামপুর, নাড়াজোল এবং ঘাটালের নবগ্রাম, রানিরবাজার প্রভৃতি এলাকায়।

বেশিরভাগই সঙ্কীর্ণ রাস্তা। প্রতিদিন বাড়ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা। অনেকেই বলছেন দু’একবার রাস্তা সম্প্রসারণ করেও লাভ হয়নি। বাজারই দখল করে নিচ্ছে অর্ধেক। যাঁরা বাজারে আসছেন তাঁরাও সমস্যায় পড়ছেন। আর বাসে বসে থাকতে থাকতে পেরিয়ে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আধ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে সময় লেগে যাচ্ছে আধ ঘন্টারও বেশি।

দাসপুরের একাধিক বাসিন্দার এসেছিলেন ওই রাস্তার উপরই বাজার করতে। তিনি বলেন, “এ ভাবে বাজার বসে রাজনৈতিক দলগুলির ইন্ধনে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মোটা টাকার লেনদেনও চলে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের সাফ কথা, “বাজার যেখানে বসবে, আমরাও সেখানেই বাজার করতে যাব। কিন্তু আমাদের প্রতিবাদ করার তো কোনও সাহস নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement