অভিষেকের জনজোয়ার কর্মসূচিতে হামলা চালানোর অভিযোগ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। —ফাইল ছবি।
তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের আওতায় আসার জন্য আদিবাসী কুড়মি সমাজের আন্দোলন অনেক দিন ধরেই চলছে। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের উপর চাপ তৈরি করতে চেয়ে পথেও নেমেছেন তারা। দীর্ঘ সময় রেল অবরোধ হয়। অভিষেক ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে জঙ্গলমহলে গেলে তাঁকে ঘেরাওয়ের আগাম পরিকল্পনাও ছিল কুড়মিদের। সেটা যাতে না হয়, তার জন্য কুড়মিদের প্রতি গোড়া থেকে সহযোগিতার বার্তা দিয়েছেন তিনি। আলাপ-আলোচনার পথ খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার শালবনিতে কুড়মিদের হামলার মুখে পড়ল অভিষেকের কনভয়। ইটের ঘায়ে ভাঙল মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়ি।
শুক্রবার পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে কুড়মি সমস্যা মেটানোর কথা বলেন অভিষেক। দায়িত্ব দেন দলের দুই কুড়মি প্রতিনিধি, প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো এবং বাঘমুন্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোকে। তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেক বৈঠকে জানান, অজিত মাইতি যখন কুড়মিদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন তখন দলের নির্দেশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কুরুচিকর কথা বলায় অখিল গিরির হয়ে ক্ষমা চান স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর দিলীপ ঘোষেরা খারাপ মন্তব্যের পরও এতটুকু দুঃখপ্রকাশ করেননি। এ সব ইস্যু কেন কুড়মিদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে না? অভিষেক দলীয় নেতাদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, কেন তাঁরা তৃণমূলকে ভুল বুঝছেন? ঘেরাও, বিক্ষোভ করছে? অভিষেকের পরামর্শ, রাজনৈতিক শক্তি দিয়েই কুড়মিদের আন্দোলনের পাশে থাকতে হবে। কাছে টানতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে বান্দোয়ানে প্রবেশের পথে ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে বরডি গ্রামে কুড়মিদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন অভিষেক। তাদের দাবির কথা মন দিয়ে শুনেছিলেন। আশ্বাস দিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারের মধ্যে যতটা সম্ভব, সব কিছু দিয়েই সমস্যার চেষ্টা চলছে। দিল্লির দরবারেও বিষয়টি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর পরেই শুক্রবার দলীয় নেতৃত্বকে কুড়মি সমস্যা নিয়ে সঠিক পথে সক্রিয় হওয়ার বার্তা দেন অভিষেক। কিন্তু সেই বার্তা আপাত ভাবে কাজে লাগল না। সকালে পাশে থাকার বার্তা দিলেও সন্ধ্যায় অভিষেকের কনভয়ই হামলার মুখে পড়ল!
তবে প্রশ্ন উঠছে, অভিষেকের কর্মসূচির জন্য মোতায়েন পুলিশ বাহিনী কেন কুড়মি-ক্ষোভ সামাল দিতে ব্যর্থ হল? তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচি জঙ্গলমহলে প্রবেশ করার পর থেকেই গোলমালের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। এর আগে একাধিক বার অভিষেকের কনভয় আটকেও যায় কুড়মি বিক্ষোভের মুখে। অভিষেক নিজে কথা বলেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। এর পরেই কেন হামলার মতো অনভিপ্রেত ঘটনা আটকানো গেল না? পুলিশ প্রশাসনের তরফে অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি।