মথুরি গ্রামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় এক বাড়িপ্রাপকের সঙ্গে কথা বলছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের এক সদস্য। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।
বাড়ি তৈরির জন্য সরকারি টাকা পেয়েছেন? কেন্দ্র না রাজ্য, কোন সরকার টাকা দিয়েছে? পঞ্চায়েত থেকে বলেছে কোন যোজনায় বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছেন? বাড়ির ভিত খোঁড়ার জন্য একশো দিনের কাজের প্রকল্পে শ্রম দিবসের টাকা পেয়েছেন?
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি প্রাপকদের দুয়ারে গিয়ে এ ভাবেই একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। সরকারি টাকায় তৈরি পাকাবাড়িতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা লেখা ‘বোর্ড’ লাগানো হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখলেন তাঁরা।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের নামবদলকে ঘিরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দ্বৈরথ অব্যাহত। এমন আবহে কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে গ্রামে ঘুরে উপভোক্তাদের সাথে কথা বলে এবিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। শনিবার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম ও রামনগর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গিয়েছিলেন। রবিবার ছুটির দিনেও প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রাজ্যের সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের বিধানসভা কেন্দ্র তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ধলহরা গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার বিশ্বাস ও মথুরি গ্রামে যান। সরকারি আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি প্রাপকদের বাড়িতে গিয়ে কথা বলে খোঁজখবর নেন। তাঁরা কোন সরকারের কাছ থেকে পাকাবাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছেন তা জানতে চান।
সরকারি প্রকল্পে পাকাবাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছেন বিশ্বাস গ্রামের অমল রানা। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এদিন দুপুরে তাঁর বাড়িতে যান। বাড়িতে ছিলেন অমলের স্ত্রী যশোদা। প্রতিনিধিদলের এক সদস্য তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন? যশোদা সম্মতি জানানোর পরে তাঁর কাছে জানতে চান কেন্দ্র না রাজ্য, কোন সরকার বাড়ি তৈরির টাকা দিয়েছে জানেন? পঞ্চায়েত থেকে বলেছে কোন যোজনায় বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছেন? বাড়ি তৈরির সময় একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ৯০টি শ্রম দিবসের টাকা পেয়েছেন?
যশোদা বলেন, ‘‘কোন সরকার টাকা দিয়েছে ঠিক বলতে পারব না। তবে বাড়ির ভিত খোঁড়ার জন্য একশো দিনের কাজের টাকা এখনও পাইনি।’’ আবাস যোজনায় বাড়িপ্রাপক মথুরি গ্রামের রাধাকান্ত সাউয়ের কাছে কেম্দ্রীয় দলের সদস্যরা জানতে চান, ‘আপনার বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা লেখা নেই কেন’? রাধাকান্ত বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা লেখা ছিল।’’ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানতে চান সেই লেখা কোথায় গেল? রাধাকান্ত বলেন, ‘‘এক বছর হল বাড়ির গেটে কাগজে লেখা ছিল। সেই লেখা কখন পড়ে গেছে বা উড়ে গেছে বলতে পারব না।’’ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাড়ি প্রাপকদের কাছে জানতে চান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য মোট কত টাকা পেয়েছেন? উপভোক্তাদের ব্যাঙ্কের পাশবই ও আধার কার্ড দেখে পরিচয় মেলান তাঁরা।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় তৈরি একাধিক বাড়িতে তা উল্লেখ না থাকার অভিযোগ নিয়ে ধলহরা পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান আতিয়ার রহমানের দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় এলাকায় যে সব বাড়ি তৈরি হচ্ছে তার একেকটায় দু’তিন বার লেখা হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় বা উঠে যায়। তাই বার বার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা লিখে দিতে হয়। যাতে বাসিন্দারা জানতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় এই বাড়ি তৈরি হয়েছে।’’